।। নয় ।।
রমেনবাবু কিছুক্ষণ একা চুপচাপ বসে নানান দিক ভেবে তারপর বিকাশকে বললেন, জীবনকে একটু ডেকে নিয়ে আয় তো।
বিকাশ জানে বাবা জীবনের উপর খুব ভরসা করে। জীবন আসার পরে রমেনবাবু জীবনকে বিনির বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার ঘটনাটা পুরোটা বললেন। চিঠিটা দেখালেন। গত কয়েক সপ্তাহে তিনি বিনির আচরণের পরিবর্তন যা দেখেছেন তাও বললেন। তারপরে বললেন, শঙ্করের কথা। বললেন, আমি কি করে বিশ্বাস করি যে বিনি শঙ্করকে পছন্দ করবে? ওর না আছে বিদ্যা, কলেজও পাস করে নি। না আছে টাকা-পয়সা, না হিরোর মত চেহারা।
জীবন চুপ করে সব শুনছে আর ভাবছে এখন কি করা যায়। এদিকে পিছন থেকে বিকাশের মা ফ্যাচ-ফ্যাচ আর মাঝে মাঝে এলোপাথাড়ি মন্তব্য করে যাচ্ছে। রমেনবাবু বললেন, এখন শঙ্করই হোক বা অন্য কেউ হোক, প্রথমে জানতে হবে বিনি কোথায় আছে? কার সাথে আছে? এবং কোন বিপদে পরে নি তো? তারপরে অবস্থা বুঝে কি করা যায় ঠিক করতে হবে। এবার রমেনবাবু জীবনের হাতটা ধরে বললেন, বুঝছ তো, এটা একটা মেয়ের ব্যপার, যা করবে ভেবে চিন্তে করবে।
জীবন রমেনবাবুকে আশ্বস্ত করে বিকাশকে নিয়ে বের হয়ে গেল। এদিক ওদিক খোঁজ নিয়ে জানতে পারল যে কেউ একজন শঙ্করকে খুব ভোরে সমীরের বাড়িতে যেতে দেখেছে এবং সাথে একটা মেয়ে ছিল। জীবন আর বিকাশ দুজনেই বুঝল।
এবার জীবন বিকাশকে নিয়ে বাইকে করে সমীরের বাড়ির সামনে পৌঁছল। জীবন বাইকটা থামাতেই পরিষ্কার দেখতে পেল একটা মুখ জানালা থেকে সরে গেল। বুঝতে এতটুকু অসুবিধে হল না যে সেটা বিনিই ছিল। ভাবল, হয়ত এইরকমই একটা আশা করে বসে আছে মেয়েটা। জীবন বিকাশকে বাইরে দাড় করিয়ে রেখে সমীরের বাড়ির কলিং বেল বাজাল। সমীর দরজা খুলল। পেছনে শঙ্কর দাঁড়িয়ে।
জীবন সমীরকে পাশ কাটিয়ে শঙ্করের সামনে এগিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুই এটা কি করলি?’
শঙ্কর খুব শান্ত হয়ে বলল, ‘জীবন-দা, আমি যে কোন হিসেবেই বিনির যোগ্য নই, সেটা কাউকে বলে দিতে হবে না। রাস্তায় বিনির সাথে একসাথে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়ার যোগ্যতাটা পর্যন্ত আমার নেই। এই নিয়ে আমি নিজেই অস্বস্তিতে আছি। চান তো, আপনি এখনি ওকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারেন। কেউ কিছু জানবে না, কেউ কিছু বলবেও না। সে দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। তবে তার আগে আপনাকে একটা কথা দিয়ে যেতে হবে। সেইটে হল, গত আড়াই-তিন বছর ধরে ওর বিয়ে নিয়ে ও যেরকম হেনস্থা-অপমানিত হচ্ছে সেইটে ওকে আর সহ্য করতে হবে না। আর তা যদি না-পারেন তবে আশীর্বাদ করে যান।’
জীবন বিকাশে খুব কাছের বন্ধু। সেই সূত্রে বিনির বিয়ের বিষয়ে প্রায় সব কথাই জানত। এখন শঙ্করের আত্মপ্রত্যয় দেখে জীবন আর সেখানে থাকতে পারল না। ঘর থেকে ছিটকে বের হয়ে চলে এল। আর বের হওয়ার সময় দুই ঘড়ের পর্দার ফাঁক দিয়ে এক ঝলক বিনিকে দেখতে পেল, বুঝল বিনি সব শুনল। বাইরে এসে বিকাশকে বলল, ‘ঊঃ! কি একটা ভয়ঙ্কর পাপ কাজ করতে এসেছিলাম। ওদের দুইজনকে আমি কখনোই আলাদা করতে পারব না। তোর বোন। যা তুই ভিতরে গিয়ে ওর সাথে কথা বলে আয়। আমি অপেক্ষা করছি এইখানে।’
কিছুক্ষণ পরে জীবন দেখল বিকাশ সমীরের বাড়ির বাইরের ঘড়ের দরজা থেকে বের হয়ে আসছে আর দরজার কাছে বিনি আর শঙ্কর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। বিকাশ জীবনকে বলল, ‘চল, বাইক স্টার্ট কর। বাড়ি চল।’
— শেষ —