Home » বড় গল্প » বন্যা ত্রাণের অতিথি

বন্যা ত্রাণের অতিথি

।। এক ।।

উত্তরবঙ্গের বন্যা – প্রতি বছরের ঘটনা – অনেকটা বাৎসরিক জোয়ার ভাটার মত ব্যাপার। শহরের আশেপাশের এলাকায় বন্যার জল আসার পরে বর্ষার দিনগুলোতে – সারাদিন মেঘ মেঘ, রাস্তাঘাট জল-কাদায় ভর্তি, দোকান-বাজার তেমন কিছু বসে নি, বিশেষ কিছু করার নেই, ভেজা জামাকাপড় শুকচ্ছে না, যখন তখন বৃষ্টি – বাড়ীতে বসে খিচুড়ি ভাত খাও আর চাদর মুড়ি দিয়ে ঝিমোও; তারপর বিকেল বেলায় বৃষ্টি থামলে সেজে গুজে জল দেখতে যাও। নিজের বাড়ী না ডুবলে বন্যার জল দেখার মধ্যে বেশ একটা মজা থাকে।

বন্যার শুরুতে চলে অনেকটা টান টান উত্তেজনাপূর্ণ খেলার বা নির্বাচনের খবর নেওয়ার মত ব্যাপার – ঘণ্টায় ঘণ্টায় সর্বশেষ খবর নেওয়া যে, জল আর কতটা বাড়ল। সেই সময়ে পাড়ায় কারুর বাড়ীতে যদি বন্যা কবলিত এলাকা থেকে কেউ এসে পরে তো কথা নেই – রোমাঞ্চকর গল্প শোনার জন্যে দফায় দফায় সেখানে সবার ভিড়। কিছু লোক আবার নিজের গাম্ভীর্য বজায় রাখতে নিজে না গিয়ে ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে খবর যোগার করে। তারা ফেরত এসে ঠিক মত বলতে না পারলে যা রেগে যান সেই লোকগুলো – সেও এক দেখার মত ব্যাপার। পাড়ায় ফিচেল ছেলের তো আর অভাব থাকে না – একটা ঘটনা শুনে তার থেকে পাঁচটা গল্প বানিয়ে বলে যায়। তারপরে ওত পেতে থাকে – কখন সেই গল্পটা দশ কান ঘুরে ওর কাছে ফেরত আসছে।

একদিন এক ফিচেল ছেলে শুনল পাড়ার দাদু রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাউকে বলছেন, … এখন আরো বিপদ!

ফিচেল ছেলে পাশ থেকে বলল, ও দাদু, নদীতে বিপদ সীমার মাপার সরকারি পোলটার অনেক উপর দিয়ে এখন জল বইছে। বিপদ মাপবেন কি করে?

দাদু কি শুনলেন সে দাদুই জানেন। দাদু বললেন, সরকারি বিপদ সীমার দাগের সাথে আসল বিপদের কোন সম্পর্ক নেই। সরকারি বিপদ সীমা হল বিনা টেন্ডারে কনট্রাক্টরদের কাজ দেওয়ার এক সুযোগ।

ফিচেল ছেলে শুধু বলল, আমি জানি, আপনি তো ওই সুযোগেই। বলেই, সোজা দৌড় সেখান থেকে। বাকিরা তখন হাঁসি লুকচ্ছে। দাদু এদিক ওদিক তাকিয়ে সোজা হাটা দিলেন।

এই রকম কত গল্প তৈরি হয়, আবার তৈরি হয়ে মরেও যায়। এর পরের দফায় স্কুল, কলেজ বন্ধ হওয়া শুরু হয় – কারণ সেখানে শরণার্থীরা আসতে শুরু করে। অফিস, কোর্ট-কাচারি খোলা থাকলেও কোন কাজ হয় না। কিন্তু, সে আর নতুন কি কথা? কোন সময়েই বা কাজ হয় সেখানে? তখন জল দেখতে যাওয়ার সাথে সাথে চলে শরণার্থী দেখতে যাওয়ার হিড়িক – অনেকটা যেন চিরিয়াখানায় খাঁচা বন্দি পশু দেখতে যাওয়ার মত মজা।

শহর থেকে বের হলে ন্যাশনাল হাইওয়ের দুই পাশে – টানা জল থই থই – খাল, বিল, পুকুর, নালা সব মিলেমিশে একাকার। উপরের দিকে সব সমান, কিন্তু তল থেকে সব ধুয়ে মুছে সাফ – অনেকটা সাম্যবাদী দলের মত। যেখানে রাস্তা একটু শক্ত সেখানে সারিবদ্ধ ভাবে দূরপাল্লার লরি দাঁড়িয়ে থাকে। আর গ্রামে? সেই নিয়েই এই গল্প।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7