।। দুই ।।
রমেনবাবুর তেমন ইচ্ছে ছিল না, তবু আত্মীয়ের চাপে শেষ অবধি মেনেই নিয়েছিলেন। তখন বিনির কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা সামনে। রমেনবাবু প্রথম দিকে অনেকবার আপত্তি করেছিলেন। বলেছিলেন, পরীক্ষার আগে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করা ঠিক নয়; হাজার হোক, সে সব নিয়ে নানান চিন্তা ভাবনা মাথায় আসে; তাতে পড়ার ক্ষতি হয়। কিন্তু সবার একই কথা, বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না; দেখাশোনা, কথাবার্তা শুরু করতে ক্ষতি কি? পরীক্ষার পরে সময় মত বিয়ে দিলেই হবে। এখনই তো আর কেউ বিয়ের কথা বলছে না, কেবল আলাপ-পরিচয় মাত্র।
এসব শুনে বিনি প্রথমে বেঁকে বসেছিল। তারপরে সবার ঘ্যানর-ঘ্যানর, প্যানর-প্যানর থেকে বাঁচার জন্যে একরকম রাজি হল। যথা দিনে পাত্র পক্ষ এসে বিনিকে দেখে গেল।
আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা হওয়ার আগে অবধি বিনির তেমন কিছু মনে হয় নি। যেন নতুন কারুর সাথে আলাপ করার মত একটা ব্যাপার; তার উপর পরীক্ষার প্রস্তুতির চাপ ছিল। তাই এইসব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার তেমন সময় পায় নি। তাই বলে রঙ্গিন স্বপ্ন যে চোরাগলি দিয়ে মনের মধ্যে উঁকি মারে নি তা নয়। পরীক্ষার প্রস্তুতির মারাত্মক রুটিনের মধ্যে বিনি মাঝে মাঝে হিপ্নোটাইজ হয়ে কিছু সময় হারিয়ে ফেলত; অনেক চেষ্টা করেও সেখান থেকে বের হতে পারে নি।
সে যাহোক, দ্বিতীয় দিন পরীক্ষা দিয়ে বিনি বাড়িতে এসে সোফায় বসে কাজের মাসিকে বলল, ‘একটু ঠাণ্ডা জল দিয়ে যাবে?’ চোখটা গিয়ে পড়ল টেবিলে রাখা সানন্দার ভিতর থেকে উঁকি মেরে থাকা একটা চিঠির দিকে। চিঠিটা খোলা। চিঠিটা টেনে বের করে বিনি পড়ে ফেলল। মেয়ে পছন্দ হয় নি বলে পাত্র পক্ষ জানিয়ে দিয়েছে। বিনি লেখাগুলোকে বিশ্বাস করতে পারল না। কাজের মাসি ততক্ষণে জল দিয়ে গেছে। বিনি জল খেয়ে চিঠিটা আবার পড়ল, তারিখ দেখল। বুঝল সেটা বেশ কয়েকদিন আগেই এসেছে।
বিনির বুকের ভিতরটা ফাঁকা-ফাঁকা মনে হল; ঘামতে লাগল। বিনি উঠে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। কাঁদতে চেষ্টা করল; কিন্তু পারল না।
কিছুক্ষণ পরে বিনির মা ঘরে ঢুকে দেখে যে বিনি তখনও কলেজে যাওয়া শাড়ি পরে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। উনি ডাকলেন, ‘কিরে তোর শরীর ঠিক আছে তো? পরীক্ষা কেমন হল?’
বিনি ধীরে ধীরে উঠল। কোন কথা বলল না। শাড়ি ছেড়ে সালোয়ার-কামিজ পরে মাকে জিজ্ঞেস করল, ‘ছেলের বাড়ি থেকে যে একটা চিঠি এসেছে আমাকে জানাও নি কেন?’
বিনির মা বললেন, ‘ও তেমন কিছু না। ও ছেলে আমাদেরও তেমন পছন্দ হয় নি।’
বিনি বলল, ‘মা, বিয়েটা আমার হবে। আমার তো পছন্দ-অপছন্দ কিছু একটা থাকতে পারে।’
বিনির মা আর কোন কথা বললেন না। ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।