।। দুই ।।
যেকোন বিষয়কে বোঝার মধ্যে সুবিমলের একটা নিজস্বতা ছিল। একদিন ক্লাসে প্রফেসর ক্যালকুলাসের লিমিট থিয়োরি বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এদিকে কয়েকজন কিছুতেই বোঝতে পারছে না। সুবিমল হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে একজনকে বলল, তোর হাতের চামড়া যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে বাতাস শুরু হয়েছে, সেইটে তুই জানিস। এবার তোর অন্য হাতের একটা আঙ্গুল সেই বিন্দুটা অবধি নিয়ে যা যেখানে তোর হাতের চামড়া শেষ হয়েছে আর যেখান থেকে বাতাস শুরু হয়েছে। তোর আঙ্গুল হয় বাতাসে থেকে যাবে নতুবা অন্য হাতের চামড়া ছুঁয়ে ফেলবে। অথচ তুই জানিস যে সেইরকম একটা বিন্দু আছে। এই লিমিট থিয়োরিটা একদম সেইটেই – যতটা কাছে যাওয়া যায় – এই আর কি।
সুবিমলের এইরকম উদাহরণ শুনে প্রফেসর জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে লিমিট থিয়োরি এইরকম করে কে বোঝাল?
সুবিমল বোকার মত মুখ করে বলল, কেন স্যার? আপনি তো এতক্ষণ ধরে এইটেই বললেন।
প্রফেসার বললেন, বসো। বেশ ভালো বলেছ।
যারা এই লিমিট নিয়ে এতক্ষণ বিভ্রান্ত হয়ে ছিল তারা দৃষ্টি-লব্ধ একটা উদাহরণ পেয়ে খুব খুশি।
ক্লাস শেষ হওয়া মাত্র অপর্ণা সুবিমলকে বলল, আজ সন্ধের সময় আমাদের বাড়ি আসিস তো, একটা বিশেষ দরকার আছে।
সুবিমল যখন অপর্ণার বাড়িতে এলো, অপর্ণা সুবিমলের জন্যে বেশ যত্ন করে চা আর নোনতা বিস্কুট এনে দিল। দুজনে চা খেতে শুরু করল। অপর্ণা বলল, সুবিমল তুই যদি ভালো করে পড়িস, তুই জানিস না তুই কত কি করতে পারিস!
সুবিমল গলায় আটকে যাওয়া বিস্কুটটা এক ঢোঁক চায়ের সাথে গিলে বলল, তোকে কে বলল যে, আমি ভালো করে পড়ি না?
– না মানে, তুই যদি আরও ভালো করে পড়িস, তাহলে অনেক কিছু করতে পারবি।
– এখন যা করছি, তাই কি যথেষ্ট না?
– ঊ:, তোর সবেতেই প্যাঁচানো কথা। আমি বলছি, তুই অনেক বড় হতে পারবি।
– শোন, ছেলেদের বড় হওয়ার একটা বয়স থাকে, তারপরে আর বড় হয় না। আমার সে বয়স পার হয়ে গেছে। তাছাড়া, আমাদের বংশে খুব লম্বা বা খুব মোটা কেউ নেই।
– আরে বাবা আমি বলছি, তুই অনেক দূর যেতে পারবি।
সুবিমল অপর্ণার কানের কাছে মুখটা এনে কিছুটা আবেগজড়ানো স্বরে নিচু গলায় বলল, কিন্তু, আমি তো তোর কাছে থাকতে চাই, দূরে তো যেতে চাই না। এই বলে, সুবিমল অপর্ণার খুব কাছে সরে এল, আর আস্তে করে অপর্ণার হাতের তালুটা একটু হালকা চেপেই ছেড়ে দিল।
অপর্ণা সুবিমলের চোখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিয়ে চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ কোন কথা বলল না। সুবিমল ধীরে ধীরে চা শেষ করে বলল, কিরে? কি বিশেষ দরকার? বললি না তো?
অপর্ণা বলল, সে তেমন কিছু না। অন্য অরেকদিন বলব।
সুবিমল বলল, তাহলে আজ উঠি।
এই বলে সুবিমল বেরিয়ে গেল।