Home » ছোট গল্প » প্রেম-পর্ব » প্রতিযোগিতা

প্রতিযোগিতা

।। তিন ।।

অপর্ণার সেই প্রফেসার ফলো করার দল তখন আর নেই, সবাই যে যার মত রাস্তা দেখে নিয়েছে। এখন অপর্ণার নোটের আদান প্রদান চলে প্রধানত সুবিমলের সাথে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুবিমলকে অপর্ণার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে দিতে হয়।

এরমধ্যে সুবিমল একদিন অপর্ণার বাড়িতে গেছে। অপর্ণা গম্ভীর মুখ করে ওর নোটের খাতাটা সুবিমলের সামনে খুলে ধরে বলল, তুই নিজে ঠিক করেছিস আর আমাকে ভুল করে দিয়েছিস। প্রফেসার বললেন, গোঁজামিল দিয়ে উত্তর মিলিয়ে দিলেই কি হবে? বলে, পুরোটা কেটে দিয়েছেন। আমার লজ্জায় মাথা কাটা গেল যে, তুইও আমার সাথে এইরকম করলি। তোকে আমি অন্যরকম ভাবতাম।

সুবিমল বলল, দে তোর খাতাটা আজ, আমি একটু ভালো করে দেখি।

অপর্ণা বলল, আমি কখনো ভাবি নি যে তোর মন এত ছোটো।

সুবিমল অপর্ণার খাতাটা নিয়ে চলে গেল।

পরেরদিন সুবিমল অপর্ণাকে ডেকে নিয়ে গেল প্রফেসারের ঘরে। সুবিমল একটা পরিষ্কার কাগজে সমাধানটা লিখে ওর উদ্ভট কিন্তু সোজা পদ্ধতিটা প্রফেসারকে বুঝিয়ে জিজ্ঞেস করল, স্যার এতে কি কোন ভুল আছে?

প্রফেসার বললেন, কোন ভুল নেই। তবে সবাই এটা বুঝতে পারবে না। তাই আমি অন্যরকম করে করতে বলি যাতে সবাই বোঝে।

সুবিমল জিজ্ঞেস করল, আমি এইভাবে করলে কি আপনি এটাকে গোঁজামিল বলবেন?

প্রফেসার বললেন, না, ঠিক মত লিখতে পারলেই হল।

সুবিমল, Thank you, Sir – বলে যখন বের হয়ে যাচ্ছে, প্রফেসার বুঝতে পারলেন যে সুবিমল কেন এসেছিল। উনি বললেন, অনেকে না বুঝে তোমার মত করে শলভ করার চেষ্টা করেছিল, আমি তাদেরটা কেটে দিয়েছি।

প্রফেসারের ঘর থেকে বেরিয়ে অপর্ণা সুবিমলের সামনে সামনে হাটতে লাগল – চোখ ছল ছল। কিছুক্ষণ পরে এক নিরিবিলি জায়গায় এসে বলল, তোর বেলায় ঠিক আর আমার বেলায় গোঁজামিল।

সুবিমল বলল, আজ আর কোন ক্লাস নেই। চল তোর বাড়ি যাই। তারপর বলব।

অল্পক্ষণের রাস্তা; তবে অপর্ণা প্রফেসারের খোঁচাটা এখনো হজম করে উঠতে পারে নি। সারা রাস্তা সুবিমলের সাথে কোন কথা বলল না।

অপর্ণার বাড়ি পৌঁছে সুবিমল বলল, তোর খাতাটা বের করে আমারটার সাথে মেলা তাহলেই বুঝতে পারবি তুই কি মিস করেছিলি।

অপর্ণা নিজের ভুল বুঝতে পেরে খাতাটা বন্ধ করে সুবিমলকে জিজ্ঞেস করল, তুই এরপর কি বাইরে কোন কলেজে চলে যাবি?

সুবিমল কিছু না-ভেবেই বলল, খুব সম্ভবত তাই।

অপর্ণা ওড়নার একটা কোনা পাকাতে পাকতে বলল, তখন তো তোর অনেক ভালো বন্ধু-বান্ধবী হবে। আমাদের কথা নিশ্চয় ভুলে যাবি।

– ধুর! তাই কখনো হয় নাকি?

– আমার কথা তুই নিশ্চয়ই ভুলে যাবি?

– তুই কি পাগল হলি নাকি? তোর সাথে এত বন্ধুত্ব আমার, আর তোর কথা ভুলে যাব? হয়ত, তুই একদিন আমাকে ভুলে যাবি।

অপর্ণা সুবিমলের বাঁ কাঁধে আলতো করে হেলান দিয়ে ওড়নাটা ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই যে একদিন বলেছিলি আমার কাছ থেকে তুই দূরে যাবি না।

সুবিমল তখন ভাবছে, কখনও কি ও নিজে এইরকম কিছু ভেবেছে? আর কখনই বা এমন কথা বলেছে? কি প্রসঙ্গেই বা বলেছে?

নিঃশব্দ মুহূর্তগুলো সময়কে অনেক বেশী দীর্ঘ দেয় – বিশেষত এইরকম পরিস্থিতিতে। অপর্ণার নিশ্বাসের শব্দ তখন কথাগুলো বলে যাচ্ছে। অপর্ণার একগোছা চুল সুবিমলের নাকের পাশ দিয়ে বুকের উপরে পরে আছে। অপর্ণা হালকা ঠেসে আছে সুবিমলের কাঁধে। অপর্ণার শরীরের হালকা কাপুনি সুবিমল পরিস্কার অনুভব করতে পারছে। সব মিলিয়ে সুবিমল ঠিক করে কিছুই ভেবে উঠতে পারল না।

এমন সমেয় অপর্ণা হঠাৎ উঠে দাড়িয়ে সুবিমলের কোলের উপর পরে যাওয়া ওড়নাটাকে নিজের বুকের উপর তুলে বলল, তুই একটু বস।

মিনিট কয়েক পরে অপর্ণা ফিরত এল। হাতে কয়েকখানা নোটের খাতা আর একটা বই। বলল, তোর এই কয়টাই তো আমার কাছে ছিল। ভালো করে দেখে নে।

সুবিমল জিজ্ঞেস করল, তোর এগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে?

অপর্ণা কিছুক্ষন কোন উত্তর দিল না। মুখ ঘুরিয়ে থাকল। সুবিমল তখনও বসে আছে দেখে অন্যদিকে তাকিয়েই বলল, হ্যাঁ, এসব লিখলে গোঁজামিল বলবে। এবার থেকে যা শেষ অবধি মেলাতে পারব তাই করব।

— শেষ —

Pages: 1 2 3