দিন কয়েক পরে আমার এক বন্ধু কাজের সূত্রে কয়েক বছরের জন্যে জার্মানি চলে যাবে। জার্মানি যাওয়ার প্রস্তুতি পর্বে সে এখন ভাষা রপ্ত করছে। তারই জেরে আমাদেরকে দুই-এক লাইন জার্মানিতে ইমেইল লিখে পাঠায়। আমি সেগুলো Google Translator দিয়ে ইংরাজিতে অনুবাদ করে পড়ি। সেইরকম একটা ইমেইলের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি Google Translator-এ লিখলামঃ
“If Google translator wasn’t there, how could I read it? I will miss you. Wish you all the best.”
– তারপর এইটাকে জার্মানিতে অনুবাদ করে আমার বন্ধুকে পাঠিয়ে দিয়ে আমার মনে হল, আচ্ছা বাংলায় অনুবাদ করে দেখি তো কেমন হয়!
তাতে পেলাম –
“গুগল অনুবাদক ছিল না, আমি এটা কিভাবে পড়তে পারে? আমি আপনি মিস হবে. আপনি সব ভাল ইচ্ছা.”
এইটা দেখেই ইউনুস-দার ঘটনাটা মনে পরে গেল আমার। সেইটা বলি –
আমাদের পাড়ার কাছাকাছিতে ইউনুস নামে একজন ভদ্রলোক থাকতেন। ছোটবেলা থেকে তাকে সবসময় বেশ কেতাদুরস্ত হয়ে থাকতে দেখে এসেছি। পাড়ার মোড়ে বা চায়ের দোকানের সামনে একদল লোক গল্প করছে, আর ইউনুস-দাকে দেখেছি তাদের মধ্যে গম্ভীর মুখে বসে আছে – ভাবখানা এমন যে, তোমরা তর্ক-বিতর্ক যা করার করো; সমাধানটা তো আমাকেই দিতে হবে। ছোটদের কারুর সাথে কোন কথা বলতে হলে, ওনার গলার স্বরটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশী গম্ভীর হয়ে যেত, কথাবার্তার গতি ধীর হয়ে যেত, যেন সাধারণ ভাবে বললে আমরা বুঝব না; অনেকটা হেডমাস্টার-হেডমাস্টার গোছের ভাব। এইরকমটা দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। কমবয়সীরা ছেলেরা এইরকম লোককে এড়িয়ে চলে। উনি থাকুন ওনার গাম্ভীর্য নিয়ে আমরা থাকি আমদের চপলতায় – একটা দূরত্ব রেখে চলা – এই আর কি।
তখন আমি কলেজে পড়ি। অল্প কয়েকদিনের ছুটিতে হোস্টেল থেকে বাড়ি এসেছি। একদিন এক বন্ধুর বাড়ি যাব বলে দুপুর বেলায় খাওয়া-দাওয়ার করে বের হয়েছি। পাড়ার মোড়ে আমাকে একা পেয়ে ইউনুস-দা ওনার সেই পরিচিত ভঙ্গিতে আমাকে ডাকলেন, কিরে তোর কি খবর?
আমার থেকে বয়েসে অনেক বড়, তার উপর ওই ভাবভঙ্গি। সুতরাং অবজ্ঞা করার কোন উপায় নেই দেখে আমি ওনার কাছে গিয়ে সাইকেলটা দাঁড় করালাম। উনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় চললি এখন?
আমি বললাম, এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে। অনেক দিন ওর সাথে দেখা হয় নি। শুনলাম ও নাকি এই ছুটিতে এসেছে।
ইউনুস-দা বললেন, বেশ। তা, তুই এখন কি নিয়ে পড়ছিস?
আমি ওখান থেকে তাড়াতাড়ি কেটে পরার জন্য সম্ভাব্য সব উত্তরগুলো একদমে বলে ফেললাম, বি-এস-সি, সেকেন্ড ইয়ার, ফিজিক্স অনার্স।
শুনে খুশী হয়ে উনি চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে এলেন। বললেন, আরে নাম না একটু সাইকেল থেকে। তোদের মত ছেলেদের সাথে কথা বলেও ভালো লাগে। এখন কত কি বদলে গেছে। তোদের কাছে এসব জানতে আমার খুব ইচ্ছে করে।
ব্যাস। টোপটা আমি খেয়ে নিলাম। সাইকেল থেকে নেমে ওনার কাছে এগিয়ে গেলাম। উনি আমাকে চায়ের দোকানের কোনার দিকের একটা টেবিলে বসালেন। তারপরে দুটো চা আর মিষ্টির অর্ডার দিলেন। আমি যদিও বললাম, এই মাত্র ভাত খেয়ে বের হয়েছি; কিন্তু কে কার কথা শোনে? ওনার চাপে মিষ্টি আর চা খেতে হল। আর এই খেতে খেতে আমাদের পড়াশুনো কি রকম চলছে? কি কি পড়ছি? এর পরে কি প্ল্যান? পাস করে কি করা যেতে পারে এর পরে ইত্যাদি নানান কথা হল। একসময় উনি জিজ্ঞেস করলেন, তোদের অনার্স সাবজেক্ট নিশ্চয় ইংরাজিতে লিখতে পড়তে হয়।
আমি বললাম, এখন আর তেমন কোন বাধ্য-বাধকতা নাই। বাংলাতেও লেখা যায়। তবে কেউ সেটা করে না। তারপরে কথায় কথায় বললাম, আমাদের একটা ল্যাঙ্গুয়েজও পড়তে হয়। হয় বাংলা, না-হয় ইংরাজি। তবে বেশিরভাগ ছাত্র ইংরাজিটাই নেয়।
এইটা শোনার পরে ইউনুস-দা জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে তুইও কি ইংরাজি পড়ছিস?
বললাম, নিশ্চয়ই।
এবার উনি – দেখি তুই কি রকম ইংরাজি শিখেছিস? – বলে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগে, ওনার পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ খুলে আমাকে বললেন, লাইন-বাই-লাইন পড় আর আমাকে বাংলায় মানে করে বল।
ইউনুস-দার কাছে আমার ইংরাজি পরীক্ষা দেওয়ার এক বিন্দু ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু, কি আর করা যায় তখন? চা-মিষ্টি খেলাম যে এইমাত্র! উঠে যাই বা কি করে? অগত্যা পড়তে হল এবং লাইন-বাই-লাইন তার বাংলা মানেও করতে হল।
চিঠিটা রাজ্যের সদ্য পদপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রীকে লেখা। নিচে ইউনুস-দার নিজের পুরো নাম লেখা। তবে হাতের লেখাটা দেখে একটু মেয়েলি গোছের মনে হল।
তা যাই হোক। সাধারণত যেরকম হয়, কোন মন্ত্রীকে চিঠি লেখা মানে তো অভিযোগের একটা লম্বা তালিকা। এই চিঠিতে কিন্তু কোন অভিযোগ নেই। বরং অনেক ভালো ভালো শব্দে মন্ত্রী মহাশয়কে অত্যুক্তি করে তাঁকে সাদর সম্ভাষণে অভিনন্দন জানিয়ে এই চিঠিটা লেখা। তাঁর কাছে ইউনুস-দার অনেক প্রত্যাশা। তবে নিজের জন্য নয়। পশ্চিমবঙ্গের সব ছাত্রছাত্রীর জন্য। ছাত্ররাই হল একটা দেশের স্তম্ভ। আগামী দিনে দেশে উৎপাদন একটু কম হলেও দেশের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। আর হলেও, সেটা সাময়িক। কিন্তু নিম্নমানের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র তৈরি হলে সে ক্ষতি হবে দীর্ঘকালীন এবং তার ব্যাপ্তি বহুদূর। তারমধ্যে এও বলা আছে যে শুধু নৈতিক শিক্ষা দিলেই হবে না, তাদের আধুনিক শিক্ষা এবং উন্নত প্রযুক্তিও শেখাতে হবে। যেমন রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, খালি পেটে ধর্ম হয় না। তেমনি, কেবল নীতি বাক্যে পেট ভরে না। তাই তিনি চান ছাত্রদের দেশীয় নৈতিক মূল্যবোধের সাথে বিদেশী প্রযুক্তি শেখানো উচিৎ। শেষের দিকে লিখেছেন, তিনি মন্ত্রী মহাশয়ের দৃষ্টিভঙ্গিকে পূর্ণ সমর্থন করেন এবং তাঁর সবরকম কর্মোদ্যোগকে তিনি পূর্ণ সমর্থন করবেন। তাঁর যেকোনো প্রয়োজনে তাকে যেন ডাকা হয়। নিচে নিজের নাম ও ঠিকানা।
অবজ্ঞা নিয়ে শুরু করলেও চিঠিটা পড়ে মনটা ভরে গেল। চিঠিটা ফেরত দিতে দিতে ওনার দিকে তাকালাম। আমার মুখে নিশ্চয়ই তখন সেই অভিব্যক্তিটা ফুটে উঠেছিল।
ইউনুস-দা বললেন, যাক ইংরাজিটা মোটামুটি ভালোই শিখেছিস তাহলে। অনেকেই এই পুরো চিঠিটার বাংলায় মানে করে বলতে পারবে না।
তারপর হাসতে হাসতে বললেন, বুঝলি তো, আমার সাথে কিছু এইরকম লোকের যোগাযোগ আছে।
তারপরে গম্ভীর হয়ে বললেন, সবাই এইসবের মূল্য দিতে পারে না। তাই কাউকে বলি না। তোকে দেখে মনে হল তুই বুঝলেও বুঝতে পারবি। একদিন আসিস আমার বাড়ি। এর আগের শিক্ষা মন্ত্রীদের কাছ থেকে কত চিঠি পেয়েছি তোকে দেখাব। যা, তুই কোথায় যাচ্ছিলি যা। তোর দেরী করিয়ে দিলাম।
মনটা বেশ তরতাজা হয়ে গেল। সাইকেল হাঁকিয়ে যেখানে যাওয়ার ছিল চলে গেলাম।
তারপরে কয়েকদিন পার হয়ে গেছে। ছুটি শেষ। পরেরদিন হোস্টেলে ফিরে যাব। পাড়ার মোড়ে আড্ডা দিতে দিতে কি মনে হল বলে ফেললাম, ইউনুস-দাকে একদম অন্যরকম লোক মনে করতাম। কিন্তু বাস্তবিকই তার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে।
শুনে সবাই হা-হা করে উঠল। আমি তখন ওই চিঠিটার কথা বললাম।
পাশের একটা বেঞ্চে নিখিল-দা ওর সমবয়সীদের সাথে গল্প করছিল। সবাই প্রায় একসঙ্গে ডাকল নিখিল-দাকে। বলল, নিখিল-দা দেখুন, ইউনুস-দা একেও ছাড়ে নি। আর তার চেয়ে বড় কথা এই যে, ও এইসব বিশ্বাস করে বসে আছে।
আমি প্রতিবাদ করে বললাম, সব কিছু বাদ দিলেও এটা তো মানতে হবে যে উনি এত সুন্দর ভাবে ভেবেছেন, সেটাকে লিখেছেন; এবং আমার মনে হয় উনি মনে মনে সেটা বিশ্বাসও করেন।
শুনে সবাই আবার হো-হো করে হাসি।
তারপরে ইউনুস-দা আমাকে প্রথম থেকে শেষ অবধি যা যা বলেছিল, নিখিল-দা সবটাই পর পর বলে দিলেন।
আমি তখন ভাবছি, কেসটা কি হল? তাহলে আমি কি মুরগি হয়ে বসে আছি?
নিখিল-দা এবার বললেন, ওরে ওটা একটা মুদিখানার ঠোঙা থেকে শুরু। ঠোঙাটা একটা বইয়ের পাতা দিয়ে তৈরি যেখানে এইরকম একটা চিঠি লেখা ছিল। যেমন sample letter থাকে। সে অনেক বছর আগেকার কথা। ক্লাব ঘরের সামনে বসে আড্ডা মারছি। ঠোঙাটা ছিঁড়তে গিয়ে ওই লেখাটা প্রথম শ্যামলের চোখে পরে। তারপর শ্যামল সেটা পড়ে শোনায়। তারপরে কখন যে ইউনুস ওটাকে নিয়ে চলে যায় আমরা কেউ কিছু খেয়ালও করিনি মনেও রাখিনি।
তারপর একটু দম নিয়ে নিখিল-দা বললেন, ঘটনাটা জানা গেল বছর আটেক আগে। একদিন পুলিশ এসে ইউনুসকে ওর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমরা গেলাম থানায়। ততক্ষণে মনে হয় দু-চার ঘা খেয়েও গেছে। যাহোক, অনেক কষ্টে ওসিকে ধরাধরি করে জানা গেল, ইউনুস নাকি যাতা ভাষায় শিক্ষামন্ত্রীকে গালাগালি দিয়ে চিঠি লিখেছে এবং চ্যালেঞ্জ করেছে যে ক্ষমতা থাকলে কিছু করে দেখাক। তাই মন্ত্রীর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সকালবেলা পুলিশ সুপারকে ফোন করে বলেছে, মন্ত্রীর হাতে চিঠিটা পরে নি এখনো, তাড়াতাড়ি এই লোকটাকে সামলান।
নিখিল-দা বললেন, তারপরে আমরা হাজতে ইউনুসের সাথে দেখা করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, হ্যাঁ রে, তুই কি কোন মন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলি? মার খেয়ে ব্যথায় ককাচ্ছে। কিন্তু গলার জোর কমে নি। বলল, হ্যাঁ দিয়েছি। এরা আমাকে এখানে এনে ভয়ঙ্কর অন্যায় করেছে। জানেনা আমি কি করতে পারি।
নিখিল-দা বললেন, আমি বুঝলাম, কোথাও কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি ইউনুসকে জিজ্ঞেস করলাম, তোর কাছে চিঠির কোন কপি আছে? ও বলল, হ্যাঁ কার্বন কপি আছে। তারপর ওর বাড়ি থেকে সেই কার্বন কপি এনে আমি পড়ে তো আমারই মাথা গরম হয়ে গেল। কোন লোক এইরকম চিঠি লেখে কাউকে! আমি আবার হাজতের গরাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ইউনুস তুই জানিস এতে কি লেখা আছে? ও বলল, হ্যাঁ। বলে মোটামুটি ওই ঠোঙার চিঠির কথাগুলো বলল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে তো বাংলায়। এটা তো ইংরাজিতে। এটার কথা বল। আবার জিজ্ঞেস করলাম, তুই এটাই পাঠিয়েছিলি তো? ইউনুস বলল, এটারই আসলটা। এটা ওর কার্বন কপি।
এতটা শোনার পরে ব্যাপারটা আমার কাছে কিছুটা পরিষ্কার হলেও ধন্দ একটা থেকেই গেল। নিখিল-দা এবার বাকিটা বলে শেষ করলেন। বললেন, আমি তারপর ওসির কাছে গিয়ে চিঠির কার্বন কপিটা দেখালাম। আর বললাম, ইউনুস ইংরাজি তো দূরের কথা, বাংলাই বানান না-করে পড়তে পারবে না। কারো পুরকিতে এইসব করেছে আর অন্য কেউ ওকে মুরগি করেছে। আমার কথা শুনে, ওসি ইউনুসকে ডেকে আনালেন। জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এই চিঠিটা পাঠিয়েছেন? ইউনুস বলল, হ্যাঁ, স্যার। ওসি জিজ্ঞেস করলেন, এতে কি লেখা আছে? ইউনুস মোটামুটি ঠোঙার চিঠিটা মুখস্থ বলে দিল। ওসি তারপরে সেই কার্বন কপিটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, আপনি এটা পড়ে শোনান। ইউনুস চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। বার তিনেক ধমক দিয়েও যখন কোন কাজ হল না, তখন ওসি হাতের লাঠিটা নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই ইউনুস মুখ খুলল। বলল, স্যার আমি ইংরাজি পড়তে পারি না। আমি বাংলায় বলেছিলাম। একজন সেটাকে ইংরাজিতে লিখে দিয়েছিল। তারপর সেটাকে টাইপ করিয়ে…। ওসি ওকে থামিয়ে দিয়ে ওর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে মুড়িয়ে ফেলে দিলেন আর ইউনুসকে বললেন, এর যত কপি আছে এক্ষুনি বাড়ি গিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন, আর কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন আপনি করেন নি। অন্য কেউ আপনার নাম করে পাঠিয়েছে। এরপর থেকে ইউনুস অন্তত তিন-চার জনকে দিয়ে verify না-করিয়ে চিঠি পাঠায় না।
শুনে আমি হা-হয়ে গেছি। জিজ্ঞেস করলাম, সবই তো ভালো ছিল। এরমধ্যে ইংরাজি আনতে গেল কেন?
নিখিল-দা বললেন, ওকে থানা থেকে বের আনার পরে সেইটাই জিজ্ঞেস করেছিলাম।
তার উত্তরে ইউনুস বলেছিল, বাংলায় লিখে পাঠালে কেউ যদি বুঝে যায় যে ওটা মানে বই থেকে টুকে লেখা। তারপরে গম্ভীর হয়ে বলেছিল, তাছাড়া, ইংরাজিতে লিখলে একটু বেশী পাত্তা পাওয়া যায়। বাংলায় তো চাষাভুষো সবাই লেখে।
তারপরে একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, সমীরণটা এবার আমাকে হেবি চিট করল, জানিস।
— শেষ —