কোন অপরিচিতের সাথে কথা শুরু করার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রীতি থাকে। বিদেশে, বিশেষত আমেরিকায়, একটা রীতি আছে আবহাওয়া নিয়ে কথা শুরু করা। মোটামুটি যেকোন কাউকেই জিজ্ঞেস করা যায়, How is the weather over there? ভারতবর্ষে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে, এই কথা কাউকে জিজ্ঞেস করলে, রাঁচি যাওয়ার পথ তরান্বিত করা ছাড়া আর কোন ফল হবে না।
তখন আবহাওয়া বদলের সময়। গরমটা কমে এসেছে, কিন্তু বর্ষা তখনও সেরকমভাবে শুরু হয়নি। এইরকম এক বিকেলে বিমল দাস রাস্তা দিয়ে কাশতে কাশতে হেঁটে যাচ্ছিলেন। বিমল দাস উচ্চতায় বেশ লম্বা এবং ভয়ঙ্কর রকমের রসিক মানুষ ছিলেন। সারা জীবন সমাজের কাজ করে কাটিয়েছিলেন। ভারতবর্ষের সব বড় শহরের যে জায়গায় মহাত্মা গান্ধীর স্ট্যাচু থাকে, মালদায় সেইরকম জায়গায় আছে বিমল দাসের স্ট্যাচু। তাঁর সম্পর্কে এইটুকু বলেই গল্পের প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
বিমল দাসের উল্টো দিক থেকে উঠতি যুবকের একটা দল হেঁটে যাচ্ছিল। বিমল দাসকে দেখে তারা দু-চারটে কথা বলার জন্য দাঁড়িয়ে গেল। সেই দলে ছিল পাঁচু। পাঁচু খুব সহজেই সবাইকে ওর কথার জালে ফেলে হ্যাঁটা করে, বোকা বানায়। সে নিয়ে বন্ধুমহলে ওর নামডাক ছিল। পাঁচু বলল, ‘কি বিমলদা, এত ভালো ওয়েদার। এরমধ্যে আপনি কি করে কাশি বাধিয়ে বসলেন?’
সবাই চুপ। অপেক্ষা করছে বিমল দাসের উত্তরের জন্যে। জানে, পাঁচু এরপরেই একটা কিস্তিমাত চাল দেবে। বিমল দাস একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গতকালের আবহাওয়া সংবাদ শুনেছিলি?’
পাঁচু বলল, ‘আবহাওয়া সংবাদে আবার কি ছিল?’
বিমল দাস বললেন, ‘তুই তো নিজে থেকে বুঝতে পারবি না। তাই জিজ্ঞেস করলাম আবহাওয়া সংবাদ শুনেছিলি কি না। শুনলে জানতে পারতিস।’ বলে একটুখানি চুপ। সকলেই একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। ভাবছে, এখন না-গরম, না-ঠাণ্ডা। এরমধ্যে আবহাওয়া সংবাদ কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল? তাছাড়া, আবহাওয়া সংবাদ কেইবা শোনে?
বিমল দাস বললেন, ‘গতকাল মালদা শহরে মাটি থেকে পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি উপর দিয়ে শৈত্য প্রবাহ বয়েছিল। সেই ঠান্ডা লেগে বুকে একটু কফ জমে গেছে। ওনিয়ে তোরা ভাবিস না। ঠিক হয়ে যাবে।’ আর এই কথাটা বলার সময় পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতাটা যে ঠিক কতোটা সেইটে বোঝাবার জন্যে বিমল দাস নিজের হাতের তালুটা পাঁচুর মাথার ইঞ্ছিখানেক উপরে ধরে রেখেছিলেন।
— শেষ —