Home » বড় গল্প » চক্রবুহ্য (প্রথম পর্ব)

চক্রবুহ্য (প্রথম পর্ব)

।। আট ।।

পরের কয়েকটা দিন রতন মহা খুশীতে কাটালো। সেদিন রবিবার। শম্পা কখন বিছানা ছেড়ে উঠে গেছে রতন টের পায় নি। যখন ওর ঘুম ভাঙল দেখল, শম্পা একা একা চা খাচ্ছে। রতনকে বলল, তুমি খুব ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকি নি। ওঠো, তোমার চা এখনো গরম আছে। তারপর রতনকে বিছানাতেই চা এনে দিল। রতনের চা খাওয়া শেষ হওয়ার পরে শম্পা বলল, শোন, আমি ঠিক করেছি, কলকাতায় আর আমি থাকব না। দিল্লী চলে যাব।

রতন বলল, আমিও যাব। সেরকমই তো কথা হয়েছিল। আজ আবার তোর কি হল?

– আমার কিছু হয় নি। সবই তো হল। তোমার কোন যাওয়ার ইচ্ছে দেখছি না। তাই ভাবলাম, তুমি যদি মত বদলে থাক। আমি কোন জোর করছি না।

– আরে, আমি তো একটা ফর-সেল মানুষ। তুই যেখানে যেতে বলবি আমি যাব।

শম্পা বলল, শোনো, বেশী হৈহৈ করে যাওয়া যাবে না। আমার কাছে এখনো যা টাকা আছে, কয়েক মাস চলে যাবে। তারমধ্যে একটা কাজ জোগাড় করে নেওয়া যাবে। আজ গিয়ে দুটো টিকিট কেটে আনবে মোটামুটি দিন পনের পরে। তার মধ্যে এদিকে যা যা করার, যা গোছানোর গুছিয়ে ফেলতে হবে।

রতন বলল, ঠিক আছে।

শম্পা বলল, আমাদের শেষমেশ পালাতেই হচ্ছে। আগেরবার যখন আমাকে নিয়ে পালাতে বললাম, উড়িয়ে দিলে। দেখা যাক, এবার তোমার সাহসে কুলায় কি না?

সব পরিকল্পনা মত এগোচ্ছে। যাওয়ার আর কয়েকদিন মাত্র বাকি। রতন কারখানায় নোটিশ দিয়ে দিয়েছে। বেশ আনন্দ আর উত্তেজনার মধ্যে দিন কাটছে। এমন সময় একদিন কাজ থেকে ফেরার সময় গলির মোড়ে দেখে দুটো গাড়ি আর বেশ কয়েকজন ষণ্ডা গুন্ডা গোছের লোক দাঁড়িয়ে আছে। রতন এখানে অনেকদিন ধরে আছে। এদের কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ল না।

কেন জানি ওর মনের মধ্যে একটু ছ্যাঁত করে লাগল। বাড়ির সামনে এসে দেখে জনা তিনেক লোক ওর ঘরের দরজায় শম্পার সাথে তর্কাতর্কি করছে। রতন সেখানে পৌঁছে বলল, আপনারা কে? আমার ঘরে এসে কি করছেন?

একজন বলল, এই হচ্ছে সেই ছোকরা। সেই দিন এই গিয়েছিল মাল আনতে। আর একজন বলল, ওকে আর আমদের দরকার নেই। সোনালিকে পাওয়া গেছে। ওকে নিয়ে চল।

তখন পেছন থেকে একজন এগিয়ে এসে রতনকে বলল, শুনুন, আমারা সোনালিকে নিতে এসেছি। আপনার সাথে আমাদের কোন কথা নেই।

রতন গোটা ব্যপারটা না বুঝলেও ছবিটা পরিস্কার হয়ে গেল। এদের ভয়েই শম্পা চুপচাপ পালাতে চাইছিল। রতন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, শম্পা এগিয়ে এসে বলল, তুমি একটু ঘরের ভিতরে আসো আগে। আর সেই তিনজনকে বলল, আপনারা একটু বাইরে যান। আমি একটু পরে আপনাদের সাথেই যাব।

তারপরে রতনকে ঘরের মধ্যে টেনে এনে দরজা লাগিয়ে প্রথমে জিজ্ঞেস করল, তুমি যেদিন আমার ফ্লাটে গিয়েছিলে তুমি কি কাউকে আমার ফ্লাটের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলে? কেউ তোমাকে দেখেছিল?

রতন প্রথমে বলল, না তো। তারপরে বলল, শুধু গার্ড জানতে চেয়েছিল আমি কোন ফ্লাটে যেতে চাই।

‘আর তুমি অমনি বলে দিলে?’ ‘কি করব? ওখানকার গার্ড যে।’ ‘হায় রে। এত করে বলে দিলাম। যাক গে।’

রতন ততক্ষণে ভয়ঙ্কর উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, এরা কারা? কেন তোকে নিতে এসেছে? তুই যাবি না। আমি দেখছি ওদের।

শম্পা রতনকে টেনে ধরল। বলল, ওদের সাথে লড়তে যেও না। পারবে না। ওদের সাথে বন্দুক থাকে সবসময়। দরকার পড়লে চালিয়ে দেবে। থানা পুলিশ করেও কিছুই করতে পারবে না, বরং উল্টো তোমাকেই ফলস কেসে ফাঁসিয়ে দেবে।

রতন তখনো ফুসছে। বলল, তুই না যেতে চাইলে কি করে তোকে ওরা নিয়ে যেতে পারে?

শম্পা রতনের হাত ধরে টেনে রেখে বলল, তোমার মত আমারও এক কন্ট্রাক্ট আছে ওদের সাথে। একদিন এদের সাহায্যে ধানবাদের ওই জায়গা থেকে বের হয়ে এসেছিলাম। ওরা তো আমাকে ভালোবেসে আনে নি। ব্যবসার চুক্তিতে এনেছিল। তা এখন ছাড়বে কেন?

রতন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। শম্পা রতনের মুখের উপরে হাত চেপে ধরে বলল, বেশী চিৎকার চেঁচামিচি করো না। আমি তো চলে যাব। তোমাকে তো এখানে থাকতে হবে। পারলে চাকরীটা ফেরৎ নিয়ে নিও। তোমার কাছে এই কয়দিন খুব ভালো ছিলাম। এবারও আমাদের পালানো হল না।

তারপর শম্পা দরজা খুলে বলল, চলুন। এইবলে শম্পা লোক তিনজনের সাথে বের হয়ে গেল। আর রতন হা-করে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।

— শেষ —

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8