।। পাঁচ ।।
শম্পা যখন চা বানাতে গেল রতন পিছন থেকে শম্পাকে দেখতে দেখতে ওর ছোটবেলার অনেক কথা মনে পরে গেল। একসময়ে বন্ধুদের উস্কানিতেই হোক বা শম্পার হাবেভাবে যা ও বুঝেছিল তার থেকেই হোক, মনে মনে শম্পাকে ভালোবেসে ছিল। চোখের ভাষায়, কথায়, অকারণ আবদারে, সে কথা দুজনেই বুঝতে পারত। সেসময় পাড়ার অনেকেই জানত। তারপর শম্পা একদিন হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেল। একদিন জানতে পারল, ওর বিয়ে হয়ে দূরে কোথাও চলে গেছে। অনেকদিন মনে মনে একটা কষ্ট নিয়ে থেকেছে। তারপর কখন মন থেকে সেসব উধাও হয়ে গিয়েছিল এখন সেটা আর মনে পরে না। আজ হঠাৎ কিসের তাড়া খেয়ে সব যেন হুড়মুড় করে ঢুকতে চাইছে কিন্তু কোনটাই ঠিক করে জমে উঠছে না।
শম্পা চা নিয়ে এসে রতনকে জিজ্ঞেস করল, আর কিছু দেব?
রতন তখনও ঘোরের মধ্যে। মনে পরছিল, শেষদিন শম্পা রতনের কাছে এসে অনেক কথা বলেছিল, আরও কিছু বলার চেষ্টা করেছিল। সেগুলোর কিছুই বোঝে নি তখন। তারপর আজ বলল, আরেকটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটাই বা কি? একবার ভাবল, ওকে খুলে জিজ্ঞেস করে। এমন সময় শম্পা জিজ্ঞেস করল, কি অত ভাবছো বল তো? এতদিন যখন রাখলে আর দুটো দিন সময় দাও, আমি নিজের একটা ব্যবস্থা করে নেব।
রতন বলল, সে কথা ভাবছি না। ভাবছি, তুই কি এখনো?… বলেই সম্বিত ফিরে পেয়ে, চায়ে একটা চুমুক দিয়ে উঠে গেল বিস্কুটের কৌটোটা আনতে।
শম্পা কোন উত্তর দিল না। তবে রতনের মুখের দিকে তাকাতে ওর লজ্জা পেল। মাথা নিচু করে রতনের হাঁটা দেখতে লাগল। রতন যখন বিস্কুট নিয়ে ওর পাশে এসে বসল, শম্পা চায়ের কাপ থেকে মুখ তুলল না, শুধু বলল, আমার জন্যে তোমার কোন সম্মান হানি হবে না। সেইটুকু আশ্বাস দিয়ে পারি।
রতন ভাবছিল জিজ্ঞেস করে, তুই কি এখনো আমাকে ভালবাসিস? আমাকে মনে পরে? কেন জানি বলতে গিয়ে কথাটা আটকে গেল। মনে হল, শম্পা যদি তার অন্য কোন মানে করে বসে। অস্বস্থিতে রতন অন্য দিকে মুখ করে বসে থাকল। এতটুকু ঘরে দুইজন মানুষ গুম হয়ে থাকলে নিস্তব্ধতাই দুজনের কানে কানে একের কথা অন্যকে বলে যায়। রতন আর না থাকতে পেরে বলল, তোর কি আমার কথা মনে পড়ত কখনো? তুই কি আমাকে এখনো আগের চোখে দেখিস?
একটু হেসে শম্পা মাথা তুলে বলল, আমি তোমাকে কি চোখে দেখি সেটা কোন প্রশ্ন নয়? তুমি আমাকে কি চোখে দেখছ এখন? সেইটাই বড় কথা। একটু থেমে আবার বলল, তবে, থাক সে কথা। কাল সকালে আমি বেড়াবো, দেখি একটা ভাড়া বাড়ি খুঁজে পাই কি না?
শম্পা চায়ের কাপ দুটো তুলে নিয়ে চলে গেল।