।। কুড়ি ।।
দিন-দশেক পরের কথা। দুপুর বেলায় শম্পা তখন সবে স্নান সেরে বের হয়েছে। এমন সময় দরজায় কেউ কলিং বেল বাজাল। দরজা খুলে শম্পা দেখে সঞ্জীব এসেছে। সঞ্জীবকে দেখে শম্পা একটু আশ্চর্য হয়ে গেলেও মুখে কোনরকম তার প্রকাশ দেখাল না। বলল, ‘আসুন ভিতরে।’
সঞ্জীব বলল, ‘একেবার না-জানিয়ে মাঝ দুপুরে চলে এলাম বলে কিছু মনে করলেন না তো?’
গলার স্বর একইরকম রেখে ‘ভিতরে আসুন’, বলে শম্পা দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াল। সঞ্জীব ঘরে ঢুকে সোজা সোফায় গিয়ে বসল। শম্পা দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে সঞ্জীবের সামনে এসে দাঁড়াল। শম্পাকে দেখে ও বুঝল এইমাত্র ও স্নান সেরে উঠেছে। চুল ডগা চুইয়ে তখনও এক-আধ ফোঁটা জল পড়ছে। তাতে পিঠের দিকে কামিজ একটু ভিজে পিঠের সাথে লেগে আছে। ঘরের মধ্যে কোথাও একটা ঘরে ধুপকাঠি জ্বলছে আর তার ঘন্ধে ঘরটা একটা সুগন্ধে ভরে আছে। সঞ্জীব জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি রোজ স্নান করে পুজো করেন?’
শম্পা বলল, ‘একদমই না।’ তারপরে হাসতে হাসতে বলল, ‘আপনি দেখছি একদম স্টিরিও টাইপ লোক।’
কথাটা শুনে সঞ্জীব একটু অস্বস্থিতে পড়ল। বলল, ‘এই গন্ধটা তো ধুপকাঠির।’
‘সেটা ঠিক। তবে ধুপকাঠি কি কেবল পুজো করলেই জ্বালাতে হয়?’
সঞ্জীব নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাথাটা নিচু করে নিল। তারপরে বলল, ‘গন্ধটা খুব সুন্দর।’
শম্পা সঞ্জীবের সামনের চেয়ারে বসে বলল, ‘আমি নাস্তিক নই, তবে পুজোও করি না। ছোটবেলা থেকে আমার ধুপকাঠির গন্ধ খুব ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে জ্বালাই।’
সঞ্জীব ঘরের কোনে একটা মূর্তির দিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ওটা কিসের মূর্তি?’
শম্পা বলল, ‘রাধা।’
সঞ্জীব জিজ্ঞেস করল, ‘আর কৃষ্ণের মূর্তি নেই?’
শম্পা বলল, ‘ছিল এক সময়ে। এক দিন মনে হল ওই মূর্তি রাখার কোন মানে হয় না। তাই ওটা একজনকে দিয়ে দিলাম।’
‘কেন? রাধা-কৃষ্ণ তো প্রেমের মূর্তি। কৃষ্ণ হল বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। হিন্দু ধর্মে বিষ্ণুকে রক্ষাকর্তা হিসেবে মানা হয়। আপনি রাধার মূর্তি রেখে দিলেন আর কৃষ্ণের মূর্তি বিদায় করে দিলেন। এর কি কারণ?’
‘আপনি কি এই কথা জিজ্ঞেস করতে এই মাঝ-দুপুরে এসেছেন আমার কাছে?’
‘এটা জানতে আসিনি নিশ্চয়। তবে এই মুহূর্তে এর কারণটা না-শুনেও আমি উঠছি না এখান থেকে।’
‘কি হবে জেনে? আমি তো আমার অভিমত জানিয়ে দল বানাতে চাইছি না, বা আমি কোন মতবাদও তৈরি করতে যাচ্ছি না। এটা আমার নিজস্ব মতবাদ।’
‘সেইটেই তো জানতে চাইছি।’
শম্পা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘একটা কারণ বলতে পারেন যে কারণে কৃষ্ণকে পুজো করা যায়? আমি যতটুকু জানি, কৃষ্ণ রাধার সাথে প্রেম করেছিল ঠিকই। কিন্তু কৃষ্ণ যখন নিজের সাম্রাজ্য পেল তখন থেকে রাধাকে আর চিনতেও পারল না, একবারের জন্যে মনেও পড়ল না। কোথায় তাকে তার প্রেমের মর্যাদা দিল? আর রক্ষাকর্তার ভুমিকায় কৃষ্ণ? সেটা তো আরও বাজে ব্যাপার। মহাভারতে কৃষ্ণ কাকে রক্ষা করেছে? মহাভারতের যুদ্ধটা হতই। কৃষ্ণ থাকলেও হত, না-থাকলেও হত। সেই সময়ে সমাজে আর্য-অনার্যের মধ্যে যেটুকু মিল হয়েছিল যুদ্ধের সুযোগে কৃষ্ণ সেই মিলটাকে শেষ করে দিয়েছিল। এমনকি যেহেতু ঘটতকচের মধ্যে আর্য-অনার্যের মিশ্র রক্ত ছিল, অর্জুনকে বাঁচানোর অজুহাতে ঘটতকচকেও মেরে ফেলল। আর একজন মেয়ে হিসাবে আমার তো আরও অনেক কথা বলার আছে। মহাভারতের যুদ্ধটা যাতে ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসা নিয়ে হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য একটা মেয়েকে সবার সামনে উলঙ্গ করিয়ে ছাড়ল।’
‘এটা আপনি কি বলছেন? কৃষ্ণ তো দ্রৌপদিকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাল।’
শম্পার চোখ দুটো তখন তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। সঞ্জীবের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কৃষ্ণ যেমন চালাকি করতে জানতেন তেমন অসীম ক্ষমতার অধিকারীও ছিলেন। তিনি তো রক্ষাকর্তা! তাই না? তাহলে দুঃশাসন যখন দ্রৌপদিকে সভায় টেনে আনতে গেল তখন উনি কোনভাবে দুঃশাসনকে আটকাতে পারলেন না? বা দ্রৌপদিকে লুকিয়ে রাখতে পারলেন না? চালাকি বা চাতুরী তো উনি এর আগে এবং এর পরে কম করেন নি। একজন মহিলাকে সকলের সামনে উলঙ্গ করে দেওয়ার পরে উনি এলেন তাকে রক্ষা করতে। বাঃ! কি তার মহানুভবতা।’
একটু থেমে শম্পা আবার বলল, ‘নিজের স্বার্থের জন্য এবং নিজের অভিলাষ পূর্ণ করার জন্যে একজন মহিলার সম্মান, মর্যাদার কোন দাম নেই তার কাছে। তাও সে কে? না, নিজের বন্ধু পক্ষের লোকের স্ত্রী। উনি অপেক্ষা করলেন যাতে ব্যাপারটা এমন একটা চূড়ান্ত জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যাতে পাণ্ডবেরা কোন মতেই যুদ্ধ করতে পিছপা না হয়। শুধু তাই না, যুদ্ধটা যাতে চুড়ান্ত প্রতিহিংসা নিয়ে করে সেটার পাকাপাকি ব্যবস্থা করে তবে ছাড়লেন। কারণ, তাহলে তাদের কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকবে না, আর তখন কৃষ্ণ যা বলবে, পাণ্ডবেরা তাই শুনবে।’
সঞ্জীব কি বলবে ভেবে উঠতে পারল না। চুপ করে বসে থাকল।
শম্পা জিজ্ঞেস করল, ‘এরপরেও কি বলেন আমার কৃষ্ণকে পূজা করা উচিৎ?’
সঞ্জীব জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি ব্যপারটাকে এইভাবে ভাবলেন কি করে? কেউ কি আপনাকে বলেছে?’
শম্পা বলল, ‘আমি তো অনেকের মত বেশী পড়ার সুযোগ পাই নি। তাই আমি আমার বিদ্যা-বুদ্ধি দিয়ে যা বুঝি সেটাই আমার বোঝা। কেন আমি কি কিছু ভুল বললাম?’
‘না। আমি কোনদিন এইভাবে ভাবি নি।’
‘তবে আমি ভাবি, কৃষ্ণ যেই হোক। দেবতা হোক আর ধুরন্ধর পলিটিসিয়ানই হোক, বেদব্যাস যেরকমভাবে গোটা ব্যাপারটা লিখেছেন, সেরকমভাবে আর কেউ লিখতে পারলেন না। সমাজের মূল জায়গাটা এখনও একই রকম আছে। কি বলেন?’
‘আমি কি আর বলি? এই রকম ক্ষমতাশালী লোককে যখন বিদায় করতে পেরেছেন, আমি কিছু ভুল বললে তো আমাকে এখনই তাড়াবেন।’
‘আপনি আমার বন্ধু, আপনাকে তাড়ালে তো আমারই ক্ষতি। কথায় আছে, নিজের ভাল, পাগলেও বোঝে।’
সঞ্জীব বলল, ‘আপনার সম্বন্ধে যতটুকু শুনেছি আর আপনার সাথে যতটুকু কথা বলেছি, তাতে আপনার সম্বন্ধে আমার কৌতূহল দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।’
‘আমার সম্বন্ধে কি শুনেছেন তা আপনিই জানেন। তবে আমি এমন কি বললাম যে আপনি এ’কথা বলছেন?’
‘আপনি যখন যা বলেন তার মধ্যে একটা নিজস্বতা থাকে। সেইজন্যে আপনার সাথে কথা বলতে ভয় হয় আবার আপনার সাথে কথা না-বললে ভালোও লাগে না।’
শম্পা কিছু বলল না। চুপ করে বসে থাকল। সঞ্জীব কিছু একটা বলার জন্যে বলল, আচ্ছা…’
শম্পা সেদিকে নজর না-দিয়ে বলল, ‘ভয়-পাওয়া অনুভূতিটা যে সত্যি কিরকম সেটা যদি জানতেন তাহলে কোনদিন আর ভয় পেতেন না।’
এই বলে শম্পা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে কিছু মনে করতে লাগল। সঞ্জীব দেখল শম্পার চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে কানের নিচে গালের পাশ দিয়ে একটু ফুলে উঠেছে। মনে হল মুখের ভিতরে দাঁতে দাঁত ঘসছে। তারপরে একটা চাপা শ্বাস ফেলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ঘাড়ের পিছন থেকে চুলের গোছাটা টেনে সামনে নিয়ে একটু দেখে বলল, ‘একটু বসুন।’
শম্পা ঘরের ভিতরে চলে গেল। সঞ্জীব একা বসে ভাবতে লাগল, এমন মেয়ে ও এর আগে কখনো দেখে নি। নিজের যুক্তি দিয়ে সব জিনিষের একটা পরিমাপ করে রেখেছে নিজের কাছে। তারপরেই মনে হল, ওর শম্পার সম্পর্কে কি ধারণা সেইটে একদিন জিজ্ঞেস করবে। এইসব ভাবতে ভাবতেই শম্পা চুল আঁচড়ে ফিরে এল। সঞ্জীবকে বলল, ‘দেখুন তো আমার কাণ্ড। আপনি এলেন আর আমি জিজ্ঞেসই করলাম না যে আপনার খাওয়া হয়েছে কি না?’
সঞ্জীব বলল, ‘ও নিয়ে আপনি ব্যস্ত হবেন না।’
শম্পা হাসতে হাসতে উত্তর দিল, ‘ব্যস্ত হওয়াই উচিৎ ছিল। হই নি বলেই খারাপ লাগছে।’ এই বলে শম্পা রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। সঞ্জীব সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কিছু হেল্প করতে পারি কি?’
রান্না ঘরের ভিতর থেকে উত্তর এল, ‘নিশ্চয়ই। হাত ধুয়ে চটপট ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে পড়ুন। তাহলেই হবে।’
এই বলতে বলতে শম্পা কয়েকটা বাটি করে কিছু খাবার নিয়ে এসে টেবিলের উপরে সাজিয়ে রাখল আর দুটো প্লেট বের করে টেবিলে রেখে বলল, ‘আজ আপনার কপালে ভালো কিছু জুটল না। যা আছে তাই দিয়েই কাজ চালিয়ে দিন। অন্য একদিন ভালো করে খাওয়াব।’
সঞ্জীব হাত ধুয়ে একটা চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। চেয়ারটা টেনে বসে পড়ল। শম্পা কিছুটা ভাত সঞ্জীবের প্লেটে দিয়ে বলল, ‘বাকি যা খাবেন নিজেই নিয়ে নিন।’
তারপরে নিজের প্লেটে অল্প একটু ভাত নিয়ে বলল, ‘আজ যে আমার কি ভালো লাগছে, কি বলব। একা একা খেতে হচ্ছে না আজ।’
সঞ্জীব বলল, ‘দেখুন তো! আপনাকে রাতে আবার রান্না করতে হবে।’
‘দেখি আগে আপনি খেয়ে সব শেষ করতে পারেন কি না, তারপরে ভাবা যাবে।’
‘আমি সব না-খেলেও, রত্নাকরের জন্যে তো আপনাকে রান্না করতে হবে।’
‘না, অফিসের কাজে ও কয়েকদিনের জন্যে বাইরে গেছে।’
সঞ্জীব চমকে সম্পার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ওঃ, তাই নাকি?’
সঞ্জীবের রিয়াকশনটা শম্পার চোখ এড়াল না। তবে শান্তভাবে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ।’
‘কবে ফিরবে?’
‘আগামী মঙ্গলবার।’
সঞ্জীব আর কোন কথা বলল না। খেতে খেতে দেখল, শম্পা খাওয়া শেষ করে ফেলেছে। সঞ্জীব বলল, ‘আপনি তো কিছু খেলেনই না।’
‘আমি দুপুরে এইটুকুই খাই।’ তারপরে হাসতে হাসতে বলল, ‘ফিগার মেইন্টেন করতে হয় আমাদের। তাই ভোজন রসিক আর হওয়া হল না আমার।’
সঞ্জীবের খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। সঞ্জীব উঠে পড়ল। শম্পাও টেবিল থেকে সব সরিয়ে, হাত ধুয়ে এসে বসল সোফায়।
সঞ্জীব জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি নতুন বাসা পেলেন?’
‘না। এখনো পাই নি।’
‘আমার কাছে একটা খোঁজ আছে। ফ্ল্যাটটা আমার পরিচিত একজনের। আমি আপনার কথা বলে রেখেছি।’
শম্পা আনন্দে খুশি হয়ে বলল, ‘তাই নাকি?’
সঞ্জীব বলল, ‘ফ্ল্যাটখানা অনেকটা এইরকমই হবে। মধ্যবিত্ত এলাকায়। আমাদের বাড়ির কাছে। তবে…’
‘তবে কি বলে ফেলুন।’
‘সব সময়ে সত্যি কথা বলা যায় না। কেন যায় না সে নিয়ে অনেক তর্ক করা যেতে পারে, তবে যায় না। তাই…’
‘বুঝেছি। কি বলতে হবে শুনি?’
‘আমি বলেছি আপনি মল্লিকাদের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়া। সেই সুত্রে আমার সাথে চেনা জানা।’
‘আর, আর কি?’
‘রত্নাকরের রেফেরান্স দিয়েছি। তবে…’
‘যা বলার বলে ফেলুন। আপনি আমার জন্যে এত কিছু করেছেন। আমার খারাপ কিছু হয় এমন কিছু আপনি করবেন না – সেইটুকু আমি জানি। ফলে ইতস্তত করবেন না। যা বলার বলে ফেলুন।’
সঞ্জীব গম্ভীর হয়ে বলল, ‘আপনার অতীত নিয়ে আমি কিছু বলি নি। আর আপনাকে কথা দিতে হবে যে আপনি ওইরকম কিছু করবেন না, বা সেইসব লোকের সাথে কোন যোগাযোগ রাখবেন না। বাড়ির ভিতরেও না বাইরেও না।’
শুনে শম্পা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপরে মাথাটা নিচু করে চুপ করে বসে থাকল।
সঞ্জীব জিজ্ঞেস করল, ‘কি হল কিছু বলছেন না যে?’
শম্পা বলল, ‘ভাবছি, আপনার সাথে আমার এতদিন আলাপ হয় নি কেন?’
‘কেন বলছেন এই কথা?’
‘বন্ধু বলতে যা বোঝায়, আমার সেইরকম কেউ নেই। আত্মীয়স্বজন যা আছে তাদের কাছে আমি যাই না, যেতে চাইও না। তারা আমার কথা জানলে কেউ ভালোভাবে নেবে না। এই সামাজিক কাঠামোয় বরং তাদের অসুবিধাই হবে। এক-আধ জন যদিও বা মনে মনে চায়, অন্যের চাপে তারা আমাকে নিতে পারবে না। তাহলে আমার সমাজটা কি বলতে পারেন? কোথায় যাব? কার সাথে মিশব? এদিকে আমার এই অবস্থার সুযোগ নিতে প্রচুর লোক বসে আছে।’
শমা থামল। সঞ্জীব কোন কথা বলল না। শম্পা আবার বলল, ‘আমি যতদিন এস্করটের কাজ করেছি, আমাকে প্রোটেক্ট করার অনেক লোক ছিল। একটা ফ্ল্যাট পেতে কোন বেগ পেতে হত না। সেখানে টাকার জোড় চলে, ক্ষমতার জোড় চলে, মাস্তানির জোড় তো আছেই। যেই আমি সেখান থেকে বের হয়ে এলাম, আমার আর কেউ থাকল না। ওইসব কাজ করতে চাই না, অথচ অন্য কোন কাজ পাই না। ওই সমাজে যেতে চাই না, আর তার বাইরের সমাজ আমাদের নেয় না। সাহায্য করা তো দূরের কথা, ন্যায্য মর্যাদাটুকু পর্যন্ত কেউ দেয় না।’
শম্পা থামল। সঞ্জীব অবাক হয়ে শম্পার কথাগুলো শুনল আর ভাবল, কত সহজে আমরা এদের সম্পর্কে কত বাজে কথা ভাবি। একবার তলিয়ে দেখি না এদের সত্যিকারের অসুবিধাগুলো।
শম্পা আবার বলল, ‘অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে আমি ওখান থেকে বের হয়ে এসেছি। আপনার জন্যে নয়, আমি আমার নিজের জন্যেই ও পথে যাব না। এইটুকু কথা দিলাম।’ এই বলতে বলতে শম্পার গলা ধরে এলো।
শম্পার এই রূপ দেখে সঞ্জীব অবাক হয়ে গেল। এতদিন যাকে অপরূপ সুন্দরী, বলিষ্ঠ এক মেয়ে ছাড়া আর কিছুই দেখে নি, যার সাথে কথায় কখনো পারা যায় না তার ভিতরে এত কষ্ট, এইরকম অসহায় অবস্থা দেখে নিজে হতবুদ্ধি হয়ে গেল।
সঞ্জীব এবার শম্পার কাছে এসে বসল। ওর একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, ‘আমাকে যখন আপনার বন্ধু মনে করেছেন, এইটুকু জানবেন, বন্ধু হিসাবে যদি আমার কিছু করার থাকে, সেটা বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলবেন। সেখানে কোন অনুগ্রহ, দয়া, কৃপার জায়গা নেই। থাকবে আমার বন্ধুত্বের শুভেচ্ছা। এইটুকু কথা আপনাকে দিলাম।’
শম্পা আস্তে করে নিজের হাতটা টেনে নিয়ে দুই হাতে নিজের মুখটা ঢেকে বসে থাকল। সঞ্জীব পাশে বসে বুঝতে পারল শম্পা কাঁদছে। সঞ্জীব একটু সরে চুপ করে বসে থাকল।
এইরকমভাবে কাটল কিছুক্ষণ। তারপরে শম্পা উঠে ভিতরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে চখ-মুখ ধুয়ে বের হয়ে এলো। সঞ্জীবের পাশে বসে বলল, ‘আপনি যা বলেছেন আমি তাই বলব। কবে ফ্ল্যাটটা দেখেতে যেতে পারব?’
সঞ্জীব বলল, ‘এখন যারা আছে সামনের মাসের শেষে তারা বদলি হয়ে যাচ্ছে। তারপরে পাওয়া যাবে। তবে এরমধ্যে কোন একদিন আপনাকে নিয়ে যাব।’ তারপরে একটু থেমে বলল, ‘আজ উঠি। মল্লিকার সাথে দেখা করতে হবে আজ।’
Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25