।। দশ ।।
ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে রতন উল্টো দিকে হাঁটা দিল। মনে হল, রাস্তাটা যেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। এক টানা চার-পাঁচ দিন বৃষ্টি হওয়ার পরে মেঘ কেটে গিয়ে এক ফালি রোদ যখন বারান্দার এক কোনে এসে পরে, মনটা যেমন ফুরফুরে হয়ে যায়, রতনের এখন অনেকটা সেই রকম। রতনের মনে হল জুঁই আরেকটু বসলে ভালো হত। তখন কোন কথাই বলা হল না। অথচ এখন কত কথা মনে হচ্ছে। জুঁইয়ের কথাটা মনে পড়ল, Love at first sight. তার মানে কি ও প্রথম দিন থেকেই ওকে ভালবেসেছিল? ওর নিজের তেমন কিছু মনে হয় নি। হয়ত, এতদিন পরে একটা পরিবারের ছোঁয়া পেয়ে ওদিকে নজর দেয় নি। সন্ধের তরল অন্ধকার ততক্ষণে গড়িয়ে গড়িয়ে অনেক ঘন হয়ে গেছে। মনে হল, এখন যেন গরমটাও অনেক কমে গেছে। বাতাসটা বেশ ভালো লাগছে। একবার ভাবল, আবার যায় জুঁইদের বাড়ি। অনেকদিন যাওয়া হয় নি। ওর সাথে আরও একটু গল্প করে আসে। মল্লিকা বা ওর মা তো নিশ্চয়ই এসব জানে না। তারপর ভাবল, আজ গেলে আবার কয়েকদিন যাওয়া যাবে না। অফিসের কাজও এখন তেমন নেই যে রাত হবে বের হতে। কাল-পরশু কোন একদিন যাবে – এই ঠিক করে ফেরত এলো।
মোড়ের মাথায় এসে দেখে চায়ের দোকানে বিশু একা বসে আছে। রতনকে দেখে বিশু ডাক দিল। খুব একটা ইচ্ছে ছিল না তবে ভাবল, আজ বিশু এইরকমভাবে না-ডাকলে হয়ত জুঁই এই কথা বলত না। তাই বিশুর পাশে এসে বসল। বিশু ছয়মাসের বেশী একটা প্রেম টেকাতে পারে না। হয়ত টেকাতে চায় না। একটা যেতে না যেতেই আরেকটা এসে জোটে। যেন লাইন করে অপেক্ষা করছে কখন তাদের ডাক আসে। প্রথম দিকে খুব উৎসাহ নিয়ে সেসব গল্প শুনত এখন আর ভালোলাগে না এক গল্প শুনতে। বিশু আবার সেইরকমই একটা গল্প শুরু করল। রতন চা শেষ করে বলল, ‘আজ উঠি রে। কাল আবার কাজে যেতে হবে।’
পরের দুদিন নানান অজুহাত করেও মল্লিকাকে অফিসে আটকাতে পারল না যাতে দেরী করে বের হওয়া যায়। ও অফিস থেকে সময় মত বের হয়ে গেল। তার পরের দিন রত্নাকর বলল, ‘অনেকদিন তোমাদের বাড়ি যাই নি। আজ ভাবছি একটু ঘুরে যাই।’
মল্লিকার সাথে রত্নাকরকে দেখে জুঁই খুব খুশী। যাওয়া মাত্র বলল, ‘এতদিন পরে মনে পড়ল আমাদের কথা?’ তারপর, সারাদিন কি করলেন? কাল রাতে কি খেলেন? অফিসে আজকাল কাজের তেমন চাপ নেই, না? বকর বকর। মল্লিকা রত্নাকরকে বসিয়ে রেখে নিজের ঘরে চলে গেছে। বাইরের কাপড় বদলাতে। কিছুক্ষণ পরে মল্লিকার মা কয়েক কাপ চা এনে টেবিলে রাখলেন। একটা কাপ রত্নাকরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই নাও রত্নাকর।’ জুঁই বলল, ‘জানো মা, রত্নাকর-দার একটা সুন্দর নাম আছে। রতন।’ ততক্ষণে মল্লিকা এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে। মল্লিকা বলল, ‘তুই কি করে জানলি?’ জুঁই চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উত্তর দিল, ‘কথা কিছু কিছু বুঝে নিতে হয় সেতো মুখে বলা যায় না।’ ‘উফঃ, তোর সবেতে ফাজলামি। ভাল্লাগে না।’ তারপর মল্লিকা রত্নাকরকে জিজ্ঞেস করল, ‘সত্যি কি তোমার নাম রতন?’ ‘ওই আর কি, রত্নাকরের সংক্ষেপ। আগে বাড়িতে ডাকত, এখন পাড়ার ছেলেরা ডাকে।’ ‘জুঁই কি তোমার বাসায় যায় নাকি?’ রত্নাকর কিছু একটা উত্তর দেওয়ার জন্যে মুখ তুলতেই দেখতে পেল জুঁই মল্লিকার পিছনে দাঁড়িয়ে একটা আঙ্গুল নিজের ঠোঁটের উপরে চেপে ধরে অন্য হাতে নেড়ে ইশারা করছে কিছু না-বলার জন্য। রত্নাকর আবার মুখ নামিয়ে এক চুমুক চা খেয়ে উত্তর দিল, ‘হয়ত কোন গল্প করার সময়ে আমি বলে ফেলেছি। তুমি খেয়াল করো নি।’ রত্নাকর দেখল জুঁইয়ের বড় একটা নিশ্বাস পড়ল, আর বুকটা একটু নেমে গেল। রত্নাকরেরও একটা শ্বাস বের হয়ে গেল। মল্লিকা সেটা লক্ষ্য করল কিনা বোঝা গেল না। মল্লিকা বলল, ‘জুঁই আজকাল মাঝে মাঝে দমদমের দিকে যায়।’ জুঁই সেই রেশ ধরে বলল, ‘একদিন আপনার বাসায় যাব।’
এই ব্যাপারটাতে রত্নাকর একটু অস্বস্তি বোধ করল। অন্যরকম কিছু একটা হবে ভেবে এসেছিল। এখানে এসে এই লুকোচুরিটা পছন্দ হল না। ও কারুর দিকে বিশেষ নজর না-দিয়ে চা খেতে লাগল। মল্লিকার মা রান্নাঘরে কিসব করছে। রত্নাকর জানে এর একটু পরে এসে উনি বলবেন, যা আছে তাই দিয়ে কিছু খেয়ে যেও আজকে। তাই রত্নাকর আগে থেকে বলে উঠল, ‘মাসিমা, আজ কিন্তু আমি খাব না। চা খেয়েই আজ উঠবো।’ মল্লিকা বলল, ‘সে কি? এইতো এলে। এখনই যাবে কি? খেয়ে যেও।’ ‘না, আজ না। অন্য একদিন। আজ কাজ আছে।’ রত্নাকর দেখল, মল্লিকা আর কিছু বলল না। জুঁইও গম্ভীর হয়ে গেল। চা শেষ করে রত্নাকর বলল, ‘আজ চলি। আগামী সপ্তাহে আসব একদিন।’ জুঁই দরজা পর্যন্ত এলো তবে কোন কথা বলল না।
সেদিন রবিবার। রত্নাকর বুঝেছিল, আজ জুঁই আসবে। সকাল বেলা ঘরের ধুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করে দুপুরের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে একটা গল্পের বই নিয়ে চেয়ারে বসে পড়তে লাগল। জুঁই এলো অনেক দেরী করে। রতন জিজ্ঞেস করল, ‘কি ব্যাপার এত দেরী করলে যে?’ ‘বন্ধুর বাড়ির নাম করে বের হয়েছি। সেখানে একটু বসে তারপরে আসতে হল।’ ‘তুমি সেদিন আমার বাসায় আসার কথাটা লুকালে কেন?’ ‘এমনি। Stolen kisses are always sweetest.’ একটু থেমে জুঁই জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি সেদিন ওইরকম রাগ করে চলে গেলেন কেন?’ ‘রাগ করে না। আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিল। মনে হল, মল্লিকা বুঝতে পেরেছে যে আমি কিছু লুকালাম।’ ‘আপনি দিদির কাছে এই প্রথম কিছু লুকালেন তা তো নয়।’ ‘তার মানে?’ ‘আপনি শম্পাদির সব কথা দিদিকে বলেন নি।’ ‘মল্লিকা জিজ্ঞেস করে নি। তাই।’ ‘জিজ্ঞেস করলে বলতেন?’ রত্নাকর কোন উত্তর দিল না। চুপ করে বসে থাকল। মনে মনে ভাবল, কিছু মেঘ থাকে যেগুলো অনেক গাঢ় হয়ে আকাশে ওঠে ছায়া দেয়। গরমের দিনে সেরকম একটু পেলে বড় ভালো লাগে। আরেক ধরনের মেঘ হয় সেগুলো আকাশে উঠলেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। খানিক বিরক্তি লাগলেও শেষমেশ এই মেঘকেই দরকার। কি করে বোঝাই মল্লিকা তোমার মত করে ঝরবে না। ও জিজ্ঞেস করবে না। জুঁই জিজ্ঞেস করল, ‘কি ভাবছেন?’ রত্নাকর বলল, ‘ওর কি দরকার আমার বিষয়ে জানবার?’
এমন সময়ে বিশু ঠক-ঠক জানালায় দুবার টোকা মেরে রতনকে ডেকে চলে গেল। জুঁই জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, আপনার এখানে কয়জন বন্ধু আছে?’ ‘পাঁচ-ছয় জন হবে।’ ‘আপনারা রোজ আড্ডা মারেন?’ ‘না, সবাই প্রায় আমারই মত। ছুটির দিন কখনো কখনো দেখা হয় চায়ের দোকানে, বা অনেক সময় বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ওরা একটা হাঁক দিয়ে যায়। হাতে সময় থাকলে যাই।’ ‘আজ যাবেন?’ ‘না।’ ‘কেন?’ ‘তোমার সাথে গল্প করছি তাই।’ ‘আমি যদি এখন চলে যাই, তাহলে যাবেন?’ ‘জানি না। হয়ত না।’ ‘কেন?’ ‘তোমার কথার জাবড় কাটব মনে মনে।’ ‘আমি যদি না-আসতাম আজ, তাহলে যেতেন?’ ‘বোধ হয় না।’ ‘কেন?’ ‘তুমি আসবে বলে অপেক্ষা করতাম।’ ‘তাহলে মশায় আমাদের বাড়ি যান নি কেন? আগের দুই সপ্তাহে।’ ‘সেদিন তো গেলাম সেই কারণে।’ ‘আর একটু বসেই আমার উপরে রাগ দেখিয়ে উঠে গেলেন।’
এমন সমেয় আরেকজন বাইরে থেকে ডাক দিল, ‘রতন আছিস নাকি?’ জুঁই বুঝল, আড্ডা মারার ডাক আসছে। জিজ্ঞেস করল, ‘ওরা এখানে আসে না আড্ডা মারতে?’ ‘আগে আসত মাঝে মাঝে। আমাকে ডেকে নিয়ে যেত।’ ‘এখন আর আসে না?’ ‘না।’ ‘কেন আপনি মানা করেছেন?’ ‘না। শম্পা যখন এখানে ছিল, একদিন আমি ওর ব্যান্ডেজ খুলে ওষুধ লাগাচ্ছি এমন সময়ে বিশু আর আরেকজন, যে একটু আগে ডাক দিল, আমার ঘরের দরজা খোলা দেখে ঘরে ঢুকেছিল আমাকে ডাকতে। আমরা দুজনে কেউ খেয়াল করি নি। শম্পা যন্ত্রণায় কাতর, আ-উ করছে, আর আমি ব্যান্ডেজ খোলার চেষ্টা করছি যাতে ওর কম ব্যথা লাগে। ওরা কখন ঢুকেছিল টের পাই নি। টের পাই যখন বের হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোরা কতক্ষণ হল এসেছিস? ওরা বলেছিল, অনেকক্ষণ। যা এখন যা করছিস কর। পরে ফাঁকা হলে আসিস। তারপর থেকে দেখছি এই জানালায় ঠক-ঠক করা শুরু হয়েছে।’ ‘আপনার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে নি, মেয়েটা কে?’ ‘হ্যাঁ। বলেছি, আমাদের গ্রামের মেয়ে। কলকাতায় এসে অ্যাকসিডেন্ট হয়ে এই অবস্থা।’
‘হু’ বলে জুঁই গম্ভীর হয়ে গেল। রতন লক্ষ্য করল, শম্পার কথা ওঠা মাত্র জুঁই কেমন একটা শক্ত কাঠের মত হয়ে বসে থাকল। কিছু জিজ্ঞেস করার সময়েও রতনের দিক থেকে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল। এটা কি দুঃখ ঢাকার জন্যে না অভিমান দেখানোর ভঙ্গি – সেইটা রতন বুঝতে পারল না।
‘শম্পা’ বলে রতন কিছু একটা বলতে শুরু করেছিল। জুঁই রতনকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি শম্পাদির আর কোন খোঁজ নেন নি এর মধ্যে?’ ‘হ্যাঁ। কালকে ফোন করেছিলাম। বলল, এরমধ্যে দুজন লোক এসেছিল ফ্ল্যাটে তবে ম্যাডাম ছিল না ওদের সঙ্গে।’ ‘ওঃ।’ এই ‘ওঃ’ বলে জুঁই কি বোঝাতে চাইল রতন বুঝতে পারল না। জিজ্ঞেস করল, ‘কিছু বলবে?’ জুঁই কোন উত্তর দিল না।
বেশ কয়েক মিনিট কেউ কোন কথা বলল না। রতন একবার ভাবল, শম্পার কথা না-তুললেই ভালো ছিল। আবার ভাবল, জুঁইয়ের সব কিছু জানা উচিৎ যাতে পরে কিছু না-বলতে পারে। তারপর মনে হল, শম্পা যে ওর মনের কোথায় কিভাবে আছে সেটাই বুঝতে পারছে না। প্রায় বছর খানেক হতে চলল, কোন খবর নেই। ওরও কিছু করার নেই। থানা-পুলিশ করবে তার উপায় নেই। কি বলবে সেখানে। কি পরিচয় দেবে? শম্পা বাঁচতে চেয়েছিল এমন একটা খুঁটিকে ভর করে যেটা নিজেই নড়বড়ে। এবার পেলে আর যেতে দেব না। তারপরেই জুঁইয়ের দিকে চোখ গেল। দ্বিধায় মাথার ভিতরটা ফাঁকা হয়ে গেল মনে হল। মনে হল, জুঁইয়ের সাথে এটা বোধহয় ঠিক কাজ করা হল না। তারপরেই ভাবল, শম্পা যখন ইচ্ছে করে আসছে না তার কারণ আর যাই হোক, এইটুকু পরিষ্কার যে, শম্পা ওকে আর চায় না।
এদিকে জুঁই ভাবছে, কোন দিন যদি শম্পা চলে আসে রত্নাকর কি করবে? রত্নাকর কি শম্পাকে ভালোবাসে না কি একটা পুরানো টান। আবার মনে পড়ল, রত্নাকর বলেছিল, ওরা বিয়ে করতে চেয়েছিল। একবার ভাবল, এই রকম মেয়েকে কি শেষ অবধি বিয়ে করত? ওদের সম্পর্কটা কতদূর গিয়েছিল?
জুঁই জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, শম্পাদি কতদিন ছিল এখানে?’ ‘দুই মাস মত।’ ‘আপনারা কি একসাথেই থাকতেন?’ ‘এই তো একটা ঘর। একসাথে না তো কোথায় থাকব? ওর শরীরের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। প্রথম কয়দিন তো বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারে নি।’ ‘কতদিন?’ ‘প্রায় দিন দশ-বারো লেগেছিল।’ ‘তারপর? যখন সুস্থ হয়ে গেল?’ রতন চমকে উঠল। জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি ঠিক কি জানতে চাইছ বলতো?’ ‘আপনারা তো বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।’ ‘শম্পা চেয়েছিল, আমি রাজি হয়েছিলাম।’ একটু ভেবে রতন জিজ্ঞেস করল, ‘এগুলো তোমাকে সব বলেছি। ষাট দিনের ঘটনা তিরিশ মিনিটে যতটা বলা যায় সব বলেছি। তারপরেও যখন তুমি প্রশ্ন করছ, তার মানে তুমি অন্য কিছু জানতে চাও। পরিষ্কার করে বলো। তোমার সব জেনে রাখা ভালো।’
জুঁই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনারা কি বিয়ে করবেন ভেবেছিলেন, না বিয়ে করেছিলেন?’ ‘ভেবেছিলাম অন্য জায়গায় গিয়ে তারপরে বিয়ে করব। বিয়ে করিনি।’ ‘আর শম্পাদি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে দেড় মাস পাশাপাশি এমনি এমনি কাটালেন?’ ‘না, একসাথে রান্নাবান্না করেছি, খেয়েছি, ঘরদোর গুছিয়েছি। ও খুব একটা বাইরে যেত না। তাই ঘরে বসে অনেক গল্প করেছি। ছোটবেলার গল্প, ওর জীবনের নানান ঘটনার গল্প।’ রত্নাকর একটু থেমে বলল, ‘তবে তুমি এইসব জানার জন্যে এই প্রশ্ন করো নি। তোমার যা মনে হয়েছে সেটা স্বাভাবিক। বলব না যে আমার সে রকম কোন ইচ্ছে জাগে নি। বিশেষ করে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সেটা একটু বেশী হত। তবে দুটো কারণে সেটা হয় নি। এক, যেহেতু এটা ওর জীবনের একটা কষ্টের দিক, আমি ভাবতাম ও যদি আমাকে সেই সব লোকদের মত করে ভেবে বসে; আর দুই, ও আমার সাথে গল্প করে এত আনন্দে থাকত যে সেটা দেখেই আমার সময় পার হয়ে যেত।’
জুঁই চুপ করে থাকল। রতন বুঝল, জুঁই লজ্জা পেয়েছে। রত্নাকর তখন চেয়ার ছেড়ে উঠে জুঁইয়ের পাশে বসে এক হাত জুঁইয়ের পিঠের উপর দিয়ে জুঁইকে চেপে ধরে বলল, ‘তা বলে ভেবো না যে তুমি নিস্তার পেয়ে যাবে। আমি কিন্তু দস্যু রত্নাকর!’ জুঁই হেসে ফেলল। রত্নাকরের পায়ের উপরে একটা কিল মেরে বলল, ‘আপনাকে না আমি রতন-দা বলে ডাকব।’ রত্নাকর বলল, ‘তাও দাদার সাথেই প্রেম করতে হবে?’ ‘ফল পাকলে একসময় ডগার ফুলটা শুকিয়ে ঝরে যায়, দা-টাও একদিন খসে যাবে।’ রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, ‘একটু কার্বাইড লাগানো যেতে পারে না এতে?’ জুঁই রত্নাকরের কাঁধের উপর হেলান দিয়ে বলল, ‘সে দায়িত্ব আপনার।’
Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25