[আমাদের শহরে একটা বাঙালি ক্লাব আছে। নাম পূজারী। আজ সেখানে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠান হবে। এই উপলক্ষে একটা ম্যাগাজিন বের হয়। তাতে আনুষ্ঠানিক কারণে লেখা।]
যে স্মৃতিগুলো মস্তিষ্কের একবারে গোঁড়ায় গিয়ে বসে থাকে, সেইগুলো মোটামুটি জীবনের গোঁড়ার দিকের। মফঃস্বল শহরে বড় হয়ে ওঠা আমার। পাঁজির হিসাবে একদিন বসন্ত শেষ হত, শুরু হত গ্রীষ্ম। বসন্তের যে রূপ বইয়ে পড়েছি, সে রূপ আমি কোনদিন দেখিনি সেখানে। বসন্তে বইত শুকনো বাতাস, ফাটত ঠোঁট, সকালে তেল মেখে স্নান করলেও দুপুরে চামড়া খসখস করত, আমের মুকুল থেকে ছোট ছোট আম গজাত, আর আগের রাতে পার্টি থেকে ফিরে খুলে রাখা শার্টে পরের দিন যেটুকু খোশবু থাকে আমের মুকুলের সেইটুকু সৌরভ বাতাসে মিশে থাকত। নদী শুকিয়ে লোলচর্ম বুড়ির মত কোনরকমে বয়ে চলত। মাঝে মাঝে লূ ইশারা দিয়ে যেত, অনেকটা কুমীর তোমার জলকে নেমেছি, ধরতে পারবে না। এই ছিল আমার বসন্ত। বইয়ে যেরকম বসন্তের কথা বলা থাকত সেরকম বসন্ত আমার অভিজ্ঞতায় নাই। আমি বরং বইয়ে লেখা বসন্তের রূপ এই দেশে দেখতে পাই।
কোন একদিন পাঁজির পাতায় বছর শেষ হয়ে নতুন বছর আসত। আবহাওয়ার রকমফের দেখে তার অনুভব করতে পারতাম না। নতুন বছর এল – এইটা বুঝতে পারতাম দাদুর সাথে বিকাল বেলায় হালখাতা করতে গিয়ে। নানান দোকানে গিয়ে মিষ্টি খেতে খেতে বুঝতাম নতুন বছর শুরু হল আজ। কোন কোন দোকানে দাদু ধার শোধ করত, কোথাও বা এমনি নেমন্তন্ন রক্ষা করতে যেত। এই যাত্রায় দাদুর সঙ্গী থাকতাম আমি।
এখন আমি বড় হয়েছি। জীবনে অনেক ধার আছে। সেই ধার শোধ করার দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে। প্রথাগতভাবে নতুন বছরে ধার শোধ করলাম ভিসা, মাস্টার কার্ড, ও অ্যামেরিকান এক্সপ্রেসে। কিন্তু কেউ একটা মিষ্টি খাওয়ালো না। সেই অপ্রাপ্তিটা পুরণ করতে আমি আসি পূজারীতে, একটু মিষ্টি খাওয়ার জন্যে। সব বন্ধু আর পরিজনের সাথে এক সাথে বসে একটু মিষ্টি মুখ করে বলতে চাই, নতুন বছর সবার ভালো কাটুক।
ধন্যবাদান্তে,
কল্লোল নন্দী
পূজারী বোর্ডের চেয়ারম্যানের আসন থেকে।