দৈনন্দিন – ৫

পার্থ জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা মুরলি, সুন্দরবন এলাকার লোকজন এত বোকা কেন? এমন একটা ঝড় আসছে জেনেও দূরে কোন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেল না কেন?

মুরলি বলল, ঝড়ে ওদের কম ক্ষতি হয় তাই।

– কেন?

– ঝড়ে কিছু জিনিষ হয়ত তো বেঁচে যাবে। বাড়িঘর ছেড়ে দূরে চলে গেলে, তুমি কি ভাবছ ফিরত এসে একটা জিনিষও পাবে?

– কেন পাবে না?

– তস্করবৃত্তি নামে এক ধরেনের প্রফেশন আছে যারা খুব ভালো বাড়ি পরিষ্কারের কাজ করে। তুমি বোধহয় সে খবর রাখ না।

— শেষ —

দৈনন্দিন – ৪

পার্থ বলল, বুঝলে মুরলি, আজকাল এক মহা অসুবিধার মধ্যে পড়েছি। সবার নাক-মুখ ঢাকা। ভালো করে না দেখলে তো অনেকসময় চেনাই যায় না। অনেকে তো আবার ডিজাইনার মাস্ক পড়ছে। যাদের নাক ছোট তারা প্যাডেড মাস্ক পড়ছে। সবাইকে একরকম দেখায়।

মুরলি শান্ত হয়ে উত্তর দিল, সবই অভ্যেস। বুঝলে। দেখতে দেখতে সব ঠিক হয়ে যাবে। আরব শেখরা চারটে বউ নিয়ে শপিং করতে বের হয়। সবাই কালো বোরখা পরে। দেখে তো কালো রোবট ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। কখনো শুনেছ, কোন আরব শেখ ভুল করে অন্যের বউ নিয়ে বাড়ি চলে গেছে? অত ভেব না। দেখতে দেখতে একদিন সব ঠিক চিনতে পারবে।

— শেষ —

দৈনন্দিন – ৩

পার্থ বলল, ঘরে বসে থেকে আর পারা যাচ্ছে না যে। মুরলি, এবার কিছু একটা করো।

মুরলি বলল, করোনা-তারিণী পূজো করো।

– ধ্যাত। এইরকম কিছু হয় না কি?

– কেন হবে না? এইভাবেই শুরু হয়েছিল অনেক পূজা। পূজার নামে নিরামিষ খাইয়েই পার্টি দেওয়ার কাজ হয়ে যাবে। অ্যাপিটাইজার, ড্রিঙ্কস-এর কোন ঝামেলা নেই।

তার চেয়ে বড় কারণ হল, এই যে ফেসবুক জুড়ে নতুন কিছু একটা করতে হবে – এই প্রতিযোগিতায় তোমার নাম অনেকের থেকে এগিয়ে থাকবে।

বিপদ-তারিণীর ২০২০ সংস্করণ – করোনা-তারিণী। প্রবর্তকে তোমার নাম লেখা থাকবে। চাঁদ সাওদাগরের মত। পূজার বই, মন্ত্র, এটা-সেটা, পুরোহিত ট্রেনিং – ভেবেছ রয়াল্টির পরিমাণটা? ঊফফ!!!

— শেষ —

দৈনন্দিন – ২

মুরলি বলল, বুঝলে পার্থ, এই যে করোনার ঠেলায় সব কিছু বন্ধ – একেই বলে লাগাতর ধর্মঘট।

পার্থ বলল, কিন্তু এর প্রতি তো জনসাধারণের সমর্থন নেই।

মুরলি জিজ্ঞেস করল, কোনকালের কোন ধর্মঘটে সাধারণ লোকের সমর্থন থাকে হে? বন্ধের দিন দোকান-পাট খুললে চুরি-ছিন্তাই, ভাঙচুর হবে, আর গাড়ি চালালে তাতে আগুন লাগিয়ে দেবে – সেই ভয়ে সবাই বাড়ি বসে থাকে। সেইবেলায় তো কেউ কিছু বলো না।

পার্থ বলল, তা ঠিক। একটু ভেবে জিজ্ঞেস করল, কিন্তু এবারের দাবিটা কি?

– দাবি হল, জনসংখ্যা কমাও।

— শেষ —

দৈনন্দিন – ১

মুরলি বলল, বুঝলে পার্থ, আজকাল একধরনের সংক্রামক রোগ হচ্ছে। এতে সাধারণ যুক্তি-বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। কেউ সারাদিন কান্নাকাটি করছে, তো কেউ গান গাইছে, আবৃতি করেছে, কেউ একের পর এক রান্না করছে, কেউ ফেসবুক আপডেট করে চলেছে, কেউ নামি লোকের মৃত্যুতে নিজের প্রচার করছে।

– এর কোন চিকিৎসা নেই?

– এর একমাত্র উপায় হল, ঘুম থেকে উঠে দৌড় করানো যতক্ষণ না ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে। দৌড় শেষ হলেই উপসর্গগুলো আবার দেখা দেবে।

– তাঁরা জানেন না সে কথা?

– বিলক্ষণ জানে।

– তাহলে তাঁরা দৌড়াচ্ছেন না কেন?

মুরলি বলল, বাইরে করোনা নামের চিনা দস্যু ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাই।

— শেষ —

অনুগল্পঃ দৈনন্দিন

আমার ছোট শ্যালক ও তাঁর বউয়ের অনুরোধে (আসলে পুরকিতে) শুরু হয়েছিল – একশ’ শব্দের মধ্যে লেখা অনুগল্প। ওই যে হয় না? – I tag you for the challenge টাইপ। শ্বশুরবাড়ির চ্যালেঞ্জ! পুরকিটা খেয়ে ফেললাম। এদিকে তাঁরা কিন্তু মস্তি করে বেড়াচ্ছে। আর আমি লিখেই যাচ্ছি। পার্থ আসেপাশে যা দেখে, তাই নিয়ে প্রশ্ন তোলে মুরলির কাছে। আবার মুরলিও কুচুটেপনা করার জন্যে পার্থকেই বলে। দৈনন্দিন ঘটনা। ২০২০ সালের চালচিত্র।

– কল্লোল নন্দী

বেশ তো ছিল সেখানে, এটা আবার কি?

কোন কিছু লিখলে প্রথমেই মন চায় যে আত্মীয়-বন্ধু-পাঠকেরা সেটা পড়ুক – বিশেষ করে যারা বিশদভাবে সমালোচনা করে। কখনো-সখনো দেখা যায় যে সমালোচনাটাই আসল লেখার থেকে বেশী ভাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার বেশ ভালো লাগে সেইগুলো পড়তে। কিছু লিখে বই ছাপিয়ে, সেগুলো বিলি-বন্টন বা বিক্রি করা – অনেক হাঙ্গামার ব্যাপার এবং সেটা একটা ব্যয়সাপেক্ষ উদ্যোগ। তাছাড়া কিছুদিন পরে এই কাগজে ছাপা বই আর থাকবে না। আজ আমরা হাতে-লেখা তাল পাতার পুথিকে যেমন জাদুঘরে রেখে দিয়েছি, ছাপানো বই, গানের সিডি, টেপ, রেকর্ড সব সেই ঘরে স্থান পাবে। তার জায়গায় যা আসবে তা হল ডিজিটাল বই। বিষয়টা একই, তবে মাধ্যমটা আলাদা। তাই ভাবলাম কেন না সেই দিকেই এগোই।

প্রথমে ফেসবুকের স্ট্যাটাস লাইনে লিখতাম। বিপদ হল, সেটা খুব তাড়াতাড়ি তলিয়ে যায়। আড্ডাতে বন্ধুদের কেউ একজন বলল তোর লেখা পড়ে ভাল লাগল, তো আরেকজন বলল কই আমাকে দেখালি না তো। বুঝলাম, ইচ্ছেটা আছে; তবে মুখের সামনে তুলে না-ধরলে হবে না। তখন তাদের আলাদা করে পাঠাতে হত। এইভাবে কিছুদিন যাওয়ার পরে নিজের ব্যক্তিগত পাতা থেকে সরে গিয়ে Kallol’s Writing Pad (http://www.facebook.com/KallolsWritingPad) নামে ফেসবুকে আলাদা একটা পাতা বানালাম। তাতে সুবিধা হল আমাকে আর নিজের লেখা অন্যের দেওয়ালে পাঠিয়ে তাদের দেওয়াল নোংরা করতে হত না। যার ভালোলাগে এই পাতা ফলো করে, যে চায় না সে করে না। একদফা উন্নতি হল। অনেক নতুন পাঠক ও বন্ধু পেলাম। এইভাবে ভালোই চলল কিছুদিন। বেশ কিছু গল্প লিখলাম। বিপদ হল, পাতাটাতে সুচিপত্র করার কোন সহজ উপায় খুঁজে পেলাম না। তারপর খুঁজতে খুঁজতে পেলাম এই জায়গা। কিছুদিন এটাকে নেড়ে-ঘেঁটে দেখার পরে সব লেখাগুলোকে টেনে-টুনে এইখানে এনে হাজির করলাম।

এই লেখার দরূন ফেসবুকে অনেকের সাথে আলাপ হয়েছে। তাদের জন্যে এই নতুন ঠিকানা এবং নতুন লেখার লিঙ্ক ফেসবুকে পাঠিয়ে দেব। তবে পারলে, বন্ধুরা এই পাতাটাকে ফলো করেন।

– কল্লোল নন্দী